ভাঙাচোরা বিসিক থেকে বড় রপ্তানি

পিচ উঠে ইট বের হয়েছে। জমেছে পানি। জায়গায় জায়গায় গর্ত। এমনই ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আসা–যাওয়া করেন হাজার হাজার শ্রমিক। পণ্য আনা–নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরীর এক নম্বর গেটে।  ছবি: দিনার মাহমুদ
পিচ উঠে ইট বের হয়েছে। জমেছে পানি। জায়গায় জায়গায় গর্ত। এমনই ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আসা–যাওয়া করেন হাজার হাজার শ্রমিক। পণ্য আনা–নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরীর এক নম্বর গেটে। ছবি: দিনার মাহমুদ
>
  • ভাঙাচোরা সড়কে ভোগান্তি চরমে
  • বৃষ্টি হলে শ্রমিকেরা দুর্দশায় পড়েন
  • মালিকেরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন

ভাঙাচোরা সড়ক কাদায় মাখামাখি। পা বাঁচিয়ে চলবেন, তারও উপায় নেই। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। শ্রীহীন এই পরিবেশে চলছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পোশাক কারখানা। বছরে গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয় এসব কারখানা থেকে।

এলাকাটি নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি এলাকার বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরী। ভেতরের মূল বেহাল দুই সড়কের কারণে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন চার শতাধিক কারখানার প্রায় সোয়া দুই লাখ শ্রমিক। আবার বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে যায় হাঁটুপানি। তখন দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। অনেক কারখানায় পানি ঢুকে নষ্ট হয় মূল্যবান জিনিসপত্র।

বিসিকের শিল্পমালিকেরা বলছেন, বিসিক শিল্পনগরীর অবকাঠামো মান্ধাতার আমলের। অপ্রশস্ত নালা, তা-ও জায়গায় জায়গায় ভরাট হয়ে গেছে। বিসিকের পেছনের খালের বড় অংশ দখল হয়ে গেছে। ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকায় পানি জমে। বারবার তাগাদা দিয়েও সমস্যার সমাধান মিলছে না। সমস্যার কথা বললেই বিসিকের কর্তাদের একটাই উত্তর, ‘টাকা নেই।’

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হোসিয়ারি কারখানাকে একটি জায়গায় পুনর্বাসনের জন্য ১৯৮৫ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় ৫৮ দশমিক ৫২ একর জমির ওপর গড়ে তোলে বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরী। সে সময় ৩ কাঠার ৫২৮টি ও ৫ কাঠার ১৮৬টি মিলে ৭১৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে শিল্পনগরীতে রপ্তানিমুখী নিট পোশাক কারখানা গড়ে ওঠে।

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী সেখানে চার শ কারখানা আছে। তার মধ্যে রপ্তানিমুখী নিট পোশাক কারখানার সংখ্যা দুই শতাধিক। বাকিগুলো হোসিয়ারি, নিটিং, ডায়িংসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা।

বিসিক শিল্পনগরীতে গেলে শারমিন নাহার নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পানি জমে। খুব কষ্ট করে আমাদের চলাফেরা করতে হয়। দুপুরে খাওয়ার সময় হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গে বের হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ভাঙাচোরা সড়কের জন্য দ্রুত যাওয়া যায় না। দেরি হয়ে যায়। কোনো রকমে খেয়ে আবার দৌড় শুরু করতে হয়।’

ফোর ডিজাইন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে অনেক শ্রমিক অনুপস্থিত থাকেন। অনেক সময় দুই-তিন ঘণ্টা পর পানি কমলে কারখানায় আসেন। তাতে উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। তিনি বলেন, বিসিকের সামনের মূল সড়কের অবস্থাও খারাপ। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

বৃষ্টি হলে বিসিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের মূল ভবন, গ্যারেজ, জ্বালানি স্টোর, পাম্প হাউস, ডাইনিং ও রান্নাঘরের চারপাশও ময়লা পানিতে ভরে যায়। তখন ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম পরিচালনাই মুশকিল হয়ে পড়ে।

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির নেতারা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পূর্ব পাশে নিচু জমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত মার্চ মাস থেকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি চালাচালি করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবার বিসিক ২৪০ বর্গফুট সড়ক উঁচু করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ১৬ বর্গফুটের টাকা জোগাড় করে তারা। আমরা মালিকেরা টাকা দিয়ে বাকি কাজ করাই।’

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘আমরা বহুবার আবেদন করেছি বিসিকের পেছনের খালটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে। এর জন্য বৃষ্টি হলেই বিসিকে পানি জমে। মালিক-শ্রমিক সবাই ভোগান্তিতে পড়েন। কিন্তু কিছু বললেই বিসিক থেকে বলা হয়, টাকা নেই।’

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ বিসিকের এস্টেট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ না পেলে কিছু করার থাকে না। তবে নতুন করে ৪৫৭ বর্গফুট সড়ক সংস্কারের কাজ আমরা শুরু করেছি। নালার উন্নয়নকাজ ধরেছি। তবে যে টাকা পাওয়া গেছে, তাতে ৬২০ ফুটের বেশি নালার উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিসিকের সড়ক সংস্কার ও নালা নির্মাণের জন্য ডিপিপি করার নির্দেশনা পাওয়া গেছে। প্রকল্প পাস হয়ে এলে বিসিক শিল্পনগরীর অবকাঠামোগত উন্নতি হবে।