বন্দর সুবিধায় ১৩ ধাপ পতন

>
  • ছয় সূচকের মধ্যে চারটিতেই পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
  • দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ
  • শীর্ষ স্থানে জার্মানি

আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমে বন্দর সুবিধা বেশি বাড়েনি, বরং কমেছে। আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে পণ্য জাহাজীকরণে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। গত বুধবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিক পারফরম্যান্স ইনডেক্স (এলপিআই) ২০১৮-এর প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে বন্দর সুবিধায় ১৩ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ এলপিআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম। ২০১৬ সালের এ সূচকে বিশ্বের ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৮৭তম। অবশ্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৮তম।

বন্দর সুবিধায় জার্মানি শীর্ষ স্থানে আছে। দেশটি ১০০ তে ১০০ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষ স্থানে আছে। আর বাংলাদেশ পেয়েছে ৬২ শতাংশ পয়েন্ট। বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর—সব ধরনের বন্দরের সুবিধা নিয়ে প্রতি দুই বছর পর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। মূলত বন্দর ব্যবহারকারীদের ওপর জরিপের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গতবারের মতো এবারও র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে জার্মানি। শুল্কায়ন, অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক জাহাজীকরণ, বিভিন্ন পর্যায়ে আনুষঙ্গিক সুবিধা, পণ্যের চলাচল পর্যবেক্ষণ, পণ্য খালাসে সময়সীমা—এই ছয়টি সূচকের মাধ্যমে র‍্যাঙ্কিং করা হয়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে, সেই হারে নতুন অবকাঠামো তৈরি করতে পারছি না। আবার যে অবকাঠামো সুবিধা আছে, ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণে সেই সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এটি অর্থনীতির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি। কিন্তু প্রকল্পের কাজের দুর্বলতার কারণে এখনই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মানে হলো, যে ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে, এর মান ঠিক থাকছে না।

কত পেছাল বাংলাদেশ

সব ধরনের বন্দর সুবিধায় বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। অথচ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বন্দর সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। যে ছয়টি সূচকের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন দেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে, সেখানে চারটি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান আগের চেয়ে দুর্বল হয়েছে। যেমন শুল্কায়ন সূচকে দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮২তম। এবার সেখানে ১২০তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। অবকাঠামো সূচকে পিছিয়েছে ২২ ধাপ। অবকাঠামো সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। আন্তর্জাতিক জাহাজীকরণে ১৫ ধাপ পিছিয়ে এখন ৯৯তম স্থানে বাংলাদেশ। বিভিন্ন পর্যায়ে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সুবিধায় ৮০ থেকে ৯৪তম স্থানে নেমে গেছে।

শুধু পণ্যের চলাচল পর্যবেক্ষণ ও পণ্য খালাসে সময়সীমা সূচকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পণ্য খালাসে সময়সীমায় এক ধাপ এগিয়ে এখন ১০৮তম অবস্থানে বাংলাদেশ। আর পণ্যের চলাচল পর্যবেক্ষণ সূচকে ৩ এগিয়ে ৮৯তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের তুলনামূলক অবস্থান

সমুদ্র ও বিমানবন্দর সুবিধায় গতবারের মতো এবারও প্রথম স্থানে রয়েছে জার্মানি। জার্মানি শতভাগ পয়েন্ট পেয়ে এই অবস্থান ধরে রেখেছে। এরপরের দুটি স্থানে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন। বন্দর সুবিধা সবচেয়ে খারাপ সোমালিয়ায়। বিশ্বের ১৬৭টি দেশের মধ্যে ১৬৭তম অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দুই বছর আগেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অঞ্চলে শীর্ষে রয়েছে ভারত, তবে দেশটির বিশ্ব অবস্থান ৪২তম। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ৯২, পাকিস্তান ৯৫, মালদ্বীপ ৯৭তম অবস্থানে আছে। আর বাংলাদেশের পেছনে থেকে নেপাল ১২১, ভুটান ১৫১ ও আফগানিস্তান ১৬৫তম স্থানে আছে।

বিশ্বব্যাংকের আগের এলপিআই প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমে কত সময় লাগে, কী ধরনের আনুষ্ঠানিকতা করতে হয়—এসবের চিত্র দেওয়া হয়েছিল। এমনকি রপ্তানিমুখী পণ্যের চালান রপ্তানিকারকের কারখানা থেকে সমুদ্রবন্দর কিংবা বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে কত সময় লাগে, সেই চিত্র ছিল। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে অন্য দেশের এসব চিত্র থাকলেও বাংলাদেশের এ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালের এলপিআই অনুযায়ী, এ দেশে পণ্য খালাস বা জাহাজীকরণ করতে বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে গড়ে দুই দিন সময় লাগে। আর সরেজমিনে পরিদর্শন করা হলে সে ক্ষেত্রে সময় লাগে গড়ে তিন দিন। কারণ, গড়ে ৩৫ শতাংশ চালানের কাগজপত্র ঠিক থাকে না। ৬৫ শতাংশ চালানের ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানিকারকেরা যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে।

এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে চারটি সংস্থার কাছে ৫ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়।