চামড়ার দাম আরও কমানো হচ্ছে

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তবে তা আগের বছরের চেয়ে কম। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হবে। গত বছর প্রতি বর্গফুটের দাম ছিল ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। গতবার খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করতে চামড়া খাতের শিল্পের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে লম্বা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের কোরবানির পশুর চামড়ার নতুন দামের কথা জানান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরই অধিভুক্ত সংস্থা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন অবশ্য গতবারের চেয়ে প্রতি বর্গফুট চামড়ায় ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। তা আমলে নেওয়া হয়নি।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বছরে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। মোট চামড়ার অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।

সরকার কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে দেশি গরু-ছাগলেই কোরবানির মৌসুমের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতবার ১ কোটি ৫ লাখ গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এবার দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ১৬ লাখ।

গতবারের চেয়ে এবার চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করা হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী দুটি কারণ সামনে নিয়ে আসেন। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমেছে এবং সাভারে চামড়া শিল্পনগর স্থাপিত হলেও ব্যবসায়ীরা ওখানে পুরোপুরি কাজ শুরু করতে পারেননি। ফলে ঠিকমতো চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হচ্ছে না।

চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে সরকার জিম্মি কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বন্ধু। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চামড়া খাত খারাপ পর্যায়ে আছে। অন্য খাতে বাড়লেও চামড়া খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতেই চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার অর্থ জিম্মি হওয়া নয়।’

দাম কমানো হলে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বাইরে চামড়া চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) অত্যন্ত শক্তিশালী। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবে তারা।

চামড়া খাতের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদও। তিনি বলেন, গত বছর কেনা চামড়ার ৪০ শতাংশ এখনো মজুত আছে, যেগুলোর গুণগত মানও অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে।

ঢাকায় পাঁচ বছরে কোরবানির গরুর চামড়ার দাম (প্রতি বর্গফুট)

২০১৪ ৭৫-৮০ টাকা

২০১৫ ৫০ টাকা

২০১৬ ৫০-৫৫ টাকা

২০১৭ ৫০-৫৫ টাকা

২০১৮ ৪৫-৫০ টাকা