কাগজের পরিবর্তে বালু পাঠাল রপ্তানিকারক

আমদানি করা হয়েছিল কাগজ। কিন্তু কনটেইনার খুলে পাওয়া গেল বালুমাটি। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে। ইনসেটে বস্তা থেকে বেরিয়ে আসা বালুমাটি।  ছবি: প্রথম আলো
আমদানি করা হয়েছিল কাগজ। কিন্তু কনটেইনার খুলে পাওয়া গেল বালুমাটি। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে। ইনসেটে বস্তা থেকে বেরিয়ে আসা বালুমাটি। ছবি: প্রথম আলো
>
  • চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটির কাগজ পাঠানোর কথা
  • রপ্তানিকারক কনটেইনারে পাঠিয়েছে ৪১০ বস্তা বালুমাটি
  • চালানটির আমদানিকারক ঢাকার বনানীর প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেড

ঋণপত্র খোলা হয়েছিল কাগজ আমদানির। চীনের প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দরে চালানটি পাঠায়ও। বন্দরে আসার পর চীনের প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ডলারও পরিশোধ করা হয়। তবে কাভার্ড ভ্যান নিয়ে নিজেদের আমদানি পণ্যের চালানটি খালাস করতে গিয়ে হতবাক আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা। চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি কাগজ পাঠানোর কথা বলে কনটেইনারে পাঠিয়ে দিয়েছে ৪১০ বস্তা বালুমাটি।

গতকাল শনিবার বন্দর চত্বরে কনটেইনারটি খুলে এক পাতা কাগজও পাননি কাস্টমস কর্মকর্তারা। রহস্যময় এই চালানটি ঘিরে এখন দুটি বিষয় খতিয়ে দেখছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এক. ‘ডাবল এ ফোর সাইজ’ নামের অফসেট পেপার বা কাগজের পরিবর্তে আসা বালুমাটি রাসায়নিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জিনিসটি বালুমাটি ছাড়া অন্য কোনো খনিজ পদার্থ কি না। দুই. ডলার পাঠানোর পরও মূল্যযুক্ত পণ্য আমদানি না হওয়ায় এতে মুদ্রা পাচার হয়েছে কি না।

জানতে চাইলে কাস্টমসের উপকমিশনার নুর উদ্দিন মিলন প্রথম আলোকে বলেন, বালুমাটি পরীক্ষা ও মুদ্রা পাচারের যোগসূত্র আছে কি না, এই দুটি বিষয় খতিয়ে দেখেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, চালানটির আমদানিকারক ঢাকার বনানীর প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেড। রপ্তানিকারক চীনের ডালিয়ান রিশাংবো কমার্শিয়াল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ২১ জুন এই কাগজ আমদানির জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখায় ১৫ হাজার ৪৪০ ডলার মূল্যের ঋণপত্র খোলে প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেড। পণ্য আমদানি চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর ব্যাংকিং চ্যানেলে চীনের প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ডলার পাঠানো হয়।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি চালানটি খালাসের জন্য কাস্টম হাউসে শুল্ক-কর বাবদ প্রায় ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে। এরপর গত ২৮ আগস্ট কাভার্ড ভ্যান নিয়ে চালানটি খালাসের জন্য আমদানিকারকের প্রতিনিধি বন্দরে যান। কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কনটেইনারটি খুলে হতবাক সবাই। কাগজের পরিবর্তে বস্তা খুলে বালু পাওয়া যায়। ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য আমদানি না হওয়ায় কনটেইনারটির সব পণ্য পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতকাল কনটেইনারের সব পণ্য খুলে দেখা হয়। তাতে ৪১০ বস্তা বালুমাটি পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, খোলার আগে কনটেইনারের দরজায় লাগানো সিল অক্ষত পাওয়া যায়। অর্থাৎ চীন থেকেই বালুর বস্তা পাঠানো হয়েছে।

আমদানিকারক প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ এম এ আকবর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চীনের রপ্তানিকারক তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কাগজ না দিয়ে বালু পাঠিয়েছে। তিনি দাবি করেন, এ ঘটনার সঙ্গে মুদ্রা পাচার যায় না। কারণ পণ্যের মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা। শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। ডলার পরিশোধ হলেও তা ফেরত আনার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে তিনি জানান।

আমদানিকারক জানান, তাঁরা গত ২৯ আগস্ট বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এতে চীনা কোম্পানির প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

এ ঘটনার আগেও একাধিকবার আমদানি পণ্যের চালানে বালুর বস্তা পাওয়া যায়। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে প্লাস্টিক দানার চার কনটেইনারের একটি চালানে বালুর বস্তা পাওয়া যায়। এক বস্তাও প্লাস্টিক দানা পাওয়া যায়নি। অথচ চালানটি খালাসের আগেই ৭০ হাজার ৩৮০ ডলার চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

২০১২ সালের অক্টোবরে কস্টিক সোডা আমদানির একটি চালানে ৯০০ বস্তা বালু পাওয়া যায়। আমদানিকারক চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান ইয়াং ওয়ান গ্রুপ সে সময় জানায়, চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে কস্টিক সোডা না পাঠিয়ে বালু পাঠিয়েছে।