৯০০ কোটি টাকার সহায়তা তহবিল প্রায় ফুরিয়ে গেছে

>তহবিলে আর আট কোটি টাকা আছে। সরকার এ পর্যন্ত ৭১৮ কোটি টাকা আদায় এবং ৬০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের গঠিত ৯০০ কোটি টাকার সহায়তা তহবিল প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের দেওয়ার জন্য আর মাত্র আট কোটি টাকা বাকি আছে তহবিলে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শেয়ারবাজারে ধসের প্রায় তিন বছর পর ২০১৩ সালে ‘পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল’ গঠন করা হয়। এটি পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ওই বছরের ১৯ আগস্ট একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেই নীতিমালা অনুসরণ করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিয়ে আসছে আইসিবি।

গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ঋণ বিতরণের চিত্র তুলে ধরে আইসিবি জানিয়েছে, ৯০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ব্রোকারদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বাকি ছিল ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়ে গেছে। বাকি ৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে শিগগিরই।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সরকার স্বল্প সুদে যে ঋণ দিয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই পেয়েছেন আইসিবি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিরা। ঋণ বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাও আইসিবি। তবে বিশেষ স্কিম প্রণয়ন কমিটি ১০৮টি ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ জনকে। আর মার্জিন অংশে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৩৮ হাজার ৯৪৬ জনকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ২৫টি স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে ৩৯ হাজার ১৭৫টি আবেদন জমা পড়ে। আর যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেওয়া হয় ৩৭ হাজার ২৩০ জনকে। আবেদন অনুযায়ী ঋণের চাহিদা ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা হলেও বিতরণ করা হয় ৮৯২ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ঋণের মধ্যে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট (প্রথম), আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট (দ্বিতীয়) এবং আইসিবির মাধ্যমে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিরা পেয়েছেন ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। বাকি টাকা ঋণ পেয়েছেন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউস মিলিয়ে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিরা।

মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউসগুলোর মাধ্যমে ৩৯ হাজার ১৭৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পক্ষে যে ঋণের আবেদন পড়ে, তার মধ্যে ৩৭ হাজার ২৩০ জন বিনিয়োগকারীর নামে মঞ্জুর হয় ৯৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিতরণ হয়। সব মিলিয়ে আইসিবি ও তার দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউসগুলোর মাধ্যমে মোট ঋণ দেওয়া হয় ৮৯২ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ দিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে সরকার। প্রথমে ৯ শতাংশ ও পরে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে সরকার এ পর্যন্ত ৭১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আদায়ও করেছে।

এদিকে গত ১০ দিনে মোবাইল ফোনে বহুবার যোগাযোগ করলেও আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ছানাউল হক কোনো জবাব দেননি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা খুবই ভালো খবর যে তহবিলের টাকা পুরোটা ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কাজে লেগেছে।’ এই তহবিল থেকে সরকার যেহেতু মুনাফাও করতে পেরেছে, ফলে আরও এক থেকে দুই বছরের জন্য তহবিলটি থাকছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পুরো তহবিল শেষ হলে সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তহবিলটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বজায় রাখার জন্য বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও আইসিবি সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারে।

তবে ব্রোকার হাউস শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শাকিল রিজভী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকার চাইলে তহবিলটি আরও কিছু সময়ের জন্য বজায় রাখতে পারে। আবার বাজার ধসের আট বছর পরে এসে এখন আর না রাখলেও তেমন কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।’