খাঁটি নলেন গুড় মিলবে অনলাইনে

ভেজালমুক্ত পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন ৫ তরুণ। এ জন্য ৬০ গাছির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।

গাছিদের মাধ্যমে যশোরের ঐতিহ্যবাহী গুড় ও পাটালি উৎপাদন এবং অনলাইনের মাধ্যমে তা সারা দেশে বিপণনের উদ্যোগ নিয়েছেন পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তা। আগামীকাল শনিবার থেকে সারা দেশে এ বিপণন  শুরু হচ্ছে।

খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি যশোর জেলার ব্র্যান্ড। এ কারণে ভেজালমুক্ত গুড় ও পাটালি উৎপাদনে যশোর জেলা প্রশাসন এই তরুণদের সহায়তা দিচ্ছে। তরুণদের এ উদ্যোগের ফলে শীতের মৌসুমে সারা দেশের মানুষ যশোরের ঐতিহ্যবাহী গুড় ও পাটালির নির্ভেজাল স্বাদ নিতে পারবে।

ন্যায্য দাম না পাওয়ায় যশোরের অধিকাংশ গাছি চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ মিশিয়ে খেজুরের গুড় ও পাটালি উৎপাদন করেন। এ কারণে মানুষ সুস্বাদু এ গুড় ও পাটালি খেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে এক দশক ধরে যশোরের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এ অবস্থা থেকে শিল্পটিকে বাঁচানো ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য এগিয়ে এসেছেন যশোরের পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তা। এ জন্য প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৩  লাখ টাকা।

এ পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তার একজন নাহিদ ইসলাম। তিনি এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পাঁচ উদ্যোক্তার সবাই স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির পরিবর্তে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, যশোরের খেজুরের গুড় ও পাটালির স্বাদ নেওয়ার জন্য সারা দেশের মানুষ শীত মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু ভেজালের কারণে মানুষ কয়েক বছর ধরে গুড় ও পাটালি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এতে যশোরের এ শিল্প ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। তাই এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য প্রথম পর্যায়ে তাঁরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে যশোরের একটি ইউনিয়নের ৬০ জন গাছিকে নিয়ে নির্ভেজাল রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। গাছিদের হাতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ গুড় ও পাটালি ন্যায্য দামে কিনে অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি তাঁরা নিয়েছেন।

উদ্যোক্তারা জানান, সারা দেশের মানুষ www.kenarhat.com ঠিকানায় ঢুকে যশোরের প্রসিদ্ধ ও ভেজালমুক্ত গুড় ও পাটালির ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন। এখান থেকে আয়ের একটি অংশ গাছিদের ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় ব্যয়ও করা হবে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে এ শিল্পের ইতিবাচক প্রচারের জন্য যশোর শহরের টাউন হল মাঠে ‘সন্ধ্যা রসের আড্ডা’ নামে একটি বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সেখানে গুড়ের চা ও বিশুদ্ধ সন্ধ্যা রস পাওয়া যাবে। রসের সঙ্গে থাকবে হাতে ভাজা মুড়ি।

এটি একটি সামাজিক উদ্যোগ দাবি করে উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, খেজুরের গুড় ও পাটালি যশোর জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ। এ জেলার স্লোগান ‘নানা রঙের ফুলের মেলা/ খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের উৎকর্ষ বাড়াতে সন্ধ্যা রসের আড্ডা এবং ভেজালমুক্ত রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক তাঁদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ৬০ গাছির কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে রস, গুড় ও পাটালি সংগ্রহ করা হবে। সারা দেশে ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য মানভেদে প্রতি কেজি পাটালির দাম ঠিক করা হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি গুঁড়ের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। উদ্যোক্তারা জানান, দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে পাঁচ কেজির বেশি পণ্য কেনার ক্রয়াদেশ দেওয়া হলে ফ্রিতে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে ক্রেতার পছন্দের ঠিকানায়।

জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আওয়াল বলেন, যশোর জেলার ব্র্যান্ড ফুল ও খেজুরের গুড়। খেজুরের বিশুদ্ধ গুড় ও পাটালি উৎপাদন এবং অনলাইনের মাধ্যমে বিপণন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যকে ভালোভাবে তুলে ধরতে সহায়তা করবে। এতে ঐতিহ্য প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি তরুণেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

আগামীকাল বেলা ১১টায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজ হাট ইউনিয়ন পরিষদে বিশুদ্ধ রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে গাছিদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে গাছি সমাবেশ এবং কেনারহাটডটকমের উদ্বোধন করা হবে। জেলা প্রশাসক প্রধান অতিথি হিসেবে ওয়েবসাইটটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।