ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকুক, বৈষম্য কমুক

আলাউদ্দিন মালিক ও আকবরউদ্দিন আহমেদ
আলাউদ্দিন মালিক ও আকবরউদ্দিন আহমেদ
>

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা নিয়ে প্রথমআলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক এবং ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক সভাপতি আকবরউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ ও সানাউল্লাহ সাকিব।

প্রথম আলো: এবার নির্বাচনের আগে কোনো সহিংস পরিস্থিতি নেই। ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?

আলাউদ্দিন মালিক: আমরা দেশের মানুষের জন্য পোশাক তৈরি করি। রপ্তানি নয়। এখন আসলে ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। শীত তেমন একটা পড়ছে না। তাই শীতের পোশাকের বিক্রি বাড়ছে না। শীত সামনে রেখে আমরা যেসব পোশাক তৈরি করেছি, তা অনেকটাই মজুত রয়ে গেছে। এসব পোশাক সাধারণত সারা দেশে যায়। এবার দেখছি বিক্রি এখনো জমেনি। এ ছাড়া মানুষের হাতে তেমন টাকাপয়সা নেই। টাকা বেশি আছে কিছু মানুষের হাতে। সব মিলিয়ে ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো নয়।

প্রথম আলো: ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তো ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। সে তুলনায় এখনকার ব্যবসার পরিবেশ কেমন?

আলাউদ্দিন মালিক: তখনকার সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির কোনো তুলনা চলে না। তখন ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আসতে পারেননি। পণ্য পাঠাতে সমস্যা হয়েছে। এখন ব্যবসার পরিবেশ অনেক ভালো। পরিস্থিতি শান্ত।

প্রথম আলো: নির্বাচন ঘিরে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

আলাউদ্দিন মালিক: আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সবাই অংশগ্রহণ করুক। ভোট সুষ্ঠু হোক। সব মিলিয়ে ব্যবসার পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়। হরতাল, অবরোধ, সহিংসতা ব্যবসার ক্ষতি করে, দেশের মানুষের ক্ষতি করে। মতবিরোধ থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো তা আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করুক। এতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।

প্রথম আলো: রাজনৈতিক দলগুলো কিছুদিন পরেই তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবে। আপনাদের প্রত্যাশা কী হবে?

আলাউদ্দিন মালিক: প্রতিটি দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের উপযোগী নীতিনির্ধারণ করছে। বাংলাদেশেও অভ্যন্তরীণ শিল্পের উপযোগী নীতিমালা দরকার। সরকার সহায়তা করছে। সেটা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা যদি সরকারের নীতি-সহায়তা পাই, কর, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের চাপ যদি কম থাকে, তাহলে টিকে থাকতে পারব। আমরা চাই ছোট ব্যবসায়ীদের কর, ঋণ পাওয়া বা অন্য সব ক্ষেত্রে যেন হয়রানির শিকার না হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার থাকা উচিত।

প্রথম আলো: আপনি বলছিলেন, কিছু মানুষের হাতে বেশি টাকা।

আলাউদ্দিন মালিক: এটা সবাই জানে। এখন বড় ব্যবসায়ীরা আরও বড় হচ্ছেন। ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে না পারলে বৈষম্য আরও বাড়বে। আমরা চাই বৈষম্য নিরসনে সরকার পদক্ষেপ নিক। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিক। তাহলে বৈষম্য কমবে।

একটু উদ্যোগই পারে পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে

প্রথম আলো: সামনে নির্বাচন। পর্যটন ব্যবসা কেমন চলছে। দেশি ও বিদেশি পর্যটকেরা ভ্রমণ করছেন তো?

আকবরউদ্দিন আহমেদ: পরিস্থিতি অনেক দিন ধরে শান্ত ছিল। স্থানীয়রাও ছুটির দিনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ভ্রমণ করেছে। বিদেশিরাও প্রচুর আসছিল। দেশের মানুষ এখন সময় পেলেই ভ্রমণ করছে। তবে কয়েক দিন ধরে যেভাবে অস্থিরতা চলছে, তাতে স্থানীয়রা অনেকেই ভ্রমণ বাতিল করছে। এখন টানা তিন দিন ছুটি শুরু হয়েছে, অনেকেই কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তারাও ভয় পাচ্ছে। স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ছাড়তে চাইছে না। তবে যারা বিমানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তাদের সমস্যা হচ্ছে না। সব জায়গায় তো বিমান সুবিধা নেই। অস্থিরতারও খবর যেহেতু সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, তাই অনেক বিদেশিও ভ্রমণ বাতিল করছে। বিদেশিরা অনেক আগ থেকেই ভ্রমণের পরিকল্পনা করে, সবকিছু চূড়ান্ত করে। আশা করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং সবাই ইচ্ছেমতো ভ্রমণ করতে পারবে।

প্রথম আলো: রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ইশতেহার প্রকাশ করেনি। দলগুলোর কাছে আপনাদের চাওয়া কী?

আকবরউদ্দিন আহমেদ: আমরা ৭-১০ বছরের কর ছাড় চাই। এ ছাড়া পর্যটনের জন্য যেসব গাড়ি ব্যবহৃত হয়, তাতেও কর প্রত্যাহার চাই। এতে করে পর্যটকদের ভালো মানের গাড়ি সুবিধা দেওয়া যাবে, ভ্রমণ খরচও কিছুটা কমে আসবে। আমরা আয়করেও ছাড় চাই। পোশাক খাত তো কত সুবিধা পাচ্ছে। পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে এসব সুবিধা প্রয়োজন। বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশ ভ্রমণে আসছে, তারা তো অনেক খরচ করে। এসব আমাদের রপ্তানি আয়ের মতোই। তারা ডলার নিয়ে আসে। এ জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা থাকবে, দেশের পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে। তাতেই দেশ এগিয়ে যাবে।

প্রথম আলো: পর্যটন খাত উন্নয়নে নতুন সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করছেন?

আকবরউদ্দিন আহমেদ: ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে চার লেন হয়ে গেছে। এটার খুব প্রয়োজন ছিল। কক্সবাজারে একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যাতে বিদেশিরা কক্সবাজারে আসতে চাইলে, তাদের ঢাকায় ঢুকতে না হয়। এটা হলে বিদেশি পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। থাইল্যান্ডে অস্থিরতার সময় কিন্তু পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কারণ, অন্য পর্যটন এলাকায় তাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল। এ ছাড়া যেসব পর্যটন স্থানে এখনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি, এ নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া পর্যটনের ভালো সম্ভাবনা আছে, এমন কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করে উন্নয়ন করতে হবে। এসব স্থানে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর স্থাপন, অবকাঠামো নির্মাণ ও থাকার সুবিধা থাকতে হবে। তাহলেই পর্যটন খাত আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে এখনো পর্যটন খাতের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। একটু উদ্যোগই পারে খাতটি উন্নত করতে।