পোশাকশ্রমিকদের মজুরি সমস্যা সমাধানে কমিটি

নতুন মজুরিকাঠামো নিয়ে পোশাকশ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ সদস্যের একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি নতুন মজুরিকাঠামোতে কোনো সমস্যা থাকলে তা খুঁজে বের করে সমাধান করবে। এক মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হবে।

সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আজ মঙ্গলবার রাতে এই কমিটি গঠন করা হয়। রাজধানীর দৈনিক বাংলা এলাকায় শ্রম ভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী। তিনি জানান, ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাংসদ আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, আতিকুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা আমিরুল হক আমিন, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে টিপু মুন্সী সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলমান শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। শ্রমিকনেতারা মনে করছেন, কিছু গ্রেডে মজুরি কমে গেছে। মালিকপক্ষ বলছে তেমনটি হয়নি। সে জন্য মালিক ও শ্রমিকপক্ষের পাঁচজন করে দশজন এবং বাণিজ্য ও শ্রমসচিবকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তাঁরা বসে সমস্যার সমাধান করবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই সমস্যার সমাধান অবশ্যই হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই এ (বাসে আগুন) কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে।’

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, নতুন কাঠামোতে যে মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেখানে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখবেন কমিটির সদস্যরা। ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা হবে। ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হবে। সব মিলিয়ে এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি কোনো দিন কমবে না। কেউ যদি মজুরি কমানোর চেষ্টা করেন, তাহলে আমরা সবাই শ্রমিকের পক্ষে থাকব। তবে গাড়ি কিংবা কারখানা ভাঙচুর কোনোভাবেই চলবে না।’

শ্রমিকনেতা আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘আমরা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আমরা শ্রমিকদের ন্যায়সংগত দাবি আদায় করতে চাই। কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি কিংবা কারখানা ভাঙচুর করে দাবি আদায়কে আমরা সমর্থন করি না। বরং এটি শ্রমিক আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে।’ তিনি বলেন, নতুন মজুরিকাঠামো নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা নবগঠিত কমিটি সমাধান করবে।

আট হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করে ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বর মাসে নতুন কাঠামো কার্যকর হয়। চলতি মাস থেকে বাড়তি মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা। তবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকেরা। নির্বাচনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আজিমপুর, আব্দুল্লাহপুর, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ করেন।