গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা থাকবে

>
আ. রউফ চৌধুরী
আ. রউফ চৌধুরী
ব্যাংক এশিয়ার হাত ধরে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে গ্রামে গ্রামে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চালু করা এ সেবায় সারা দেশ থেকে যুক্ত হয়েছেন সাড়ে ৭ লাখ গ্রাহক। এ সেবার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান আ. রউফ চৌধুরী। তিনি র‍্যাংগস গ্রুপেরও চেয়ারম্যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব


প্রথম আলো: শাখা, কার্ডসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে ব্যাংক এশিয়া। এরপরও কেন এজেন্ট ব্যাংকিং? 

আ. রউফ চৌধুরী: আমাদের খুব ইচ্ছা গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার। সারা দেশের মানুষ যাতে আর্থিক সুবিধার মধ্যে থাকে। এ চাওয়া থেকেই আমাদের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করলেন। এজেন্ট ব্যাংকিংই পারে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে। এটা ইতিমধ্যে প্রমাণ হতে শুরু করেছে।

প্রথম আলো: যখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে, তখন এজেন্ট ব্যাংকিং কতটা সফল হবে?
রউফ চৌধুরী: এজেন্ট ব্যাংকিং হলো পুরোপুরি ব্যাংকিং সেবা। আর মোবাইল ব্যাংকিং হলো টাকা পাঠানোর একটা মাধ্যম মাত্র। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তো টাকা জমা রাখা ও ঋণ পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে ব্যাংকের সেবা গ্রামভিত্তিক হয়ে গেছে। সারা দেশে ব্যাংকগুলোর ৫ হাজারের মতো এজেন্ট আউটলেট চলছে। তাতে এখন ঘরে বসেই ব্যাংকিং–সুবিধা মিলছে। এটা যে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কত বড় একটা সুযোগ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আর্থিক সুবিধায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি।

প্রথম আলো: ব্যাংক শাখার সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মূল তফাৎটা কোথায়?
রউফ চৌধুরী: মানুষ তো ব্যাংক শাখায় যেতে ভয় পায়। কিন্তু এজেন্টের কাছে যেতে কখনো ভয় পাবে না। কারণ, আউটলেট চালান স্থানীয় লোকজনই। এর ফলে ব্যাংক সুবিধা সব শ্রেণির জন্য হয়ে গেছে। আমিও ছোটবেলায় ব্যাংকে যেতে ভয় পেতাম। দূর থেকে দেখতাম, কিন্তু ভেতরে যাওয়ার সাহস হতো না। কলেজে পড়া অবস্থায় প্রথম ব্যাংকে যাই ও হিসাব খুলি। আমার প্রথম হিসাবের নম্বর ছিল ১২৩৪। আশুলিয়ার র‌্যাংগস ভিলেজে সম্প্রতি একটা এজেন্ট বুথ চালু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার হিসাব খোলা হয়ে গেছে। যেসব এলাকার মানুষ কখনো ব্যাংক দেখেনি, ওই এলাকায়ও বুথ চলে গেছে।

প্রথম আলো: কারা চালাচ্ছেন এসব আউটলেট?
রউফ চৌধুরী: গ্রামের লোকজন নিজেরাই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একবার ঝিনাইদহে গিয়ে দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে দুটি মেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং চালাচ্ছেন। প্রতিটি আউটলেটে কয়েকজনের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফলে শুধু আর্থিক সুবিধা নয়, কর্মসংস্থানও তৈরি করছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা।

প্রথম আলো: ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কী পরিমাণ গ্রাহক সেবা পেয়েছেন?
রউফ চৌধুরী: সারা দেশে আমাদের আড়াই হাজার এজেন্ট আউটলেট আছে। গ্রাহক রয়েছেন সাড়ে ৭ লাখ। এসব গ্রাহক প্রায় ৭০০ কোটি টাকা জমা করেছেন, ঋণ পেয়েছেন ১৭৩ কোটি টাকা। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। আর এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৭৬৩ কোটি লেনদেন হয়েছে এ সেবায়।

প্রথম আলো: এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান?
রউফ চৌধুরী: এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছাবে তা বলা বেশ কঠিন। এখন মানুষ উড়তে শুরু করেছে। বেশি যানজট হলেই উড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে এটা বলা যেমন কঠিন, তেমনি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিস্তৃতি নিয়ে বলাও কঠিন। এজেন্ট ব্যাংকিং এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি বিস্তৃত হবে। বিজ্ঞানের কল্যাণে তা আরও দ্রুত হবে।

প্রথম আলো: দেশের ব্যাংক খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে, আবার সবচেয়ে বেশি সমালোচনাও এ খাত নিয়ে। কেন এমন হচ্ছে?
রউফ চৌধুরী: দেশের ব্যাংক খাত অনেক উন্নত হয়েছে। অর্থনীতির যে উন্নতি হয়েছে, ব্যাংক না থাকলে তা সম্ভব হতো না। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অনেক হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগের জন্য আমাদের যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন, তা ব্যাংকগুলোতে নেই। এ কারণে অল্প পরিমাণ টাকা নিয়ে সবাই টানাটানি করে। এতে মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়। ব্যাংকের তো আমানত পেতে হবে। টাকার উৎস তো সবই মানুষ। এরপরই বিনিয়োগ হবে। আর তারল্যসংকট আগেও ছিল, এখনো আছে। খেলাপি ঋণ তো এখন অনেক বেশি। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।