কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

জমি থেকে ডালিয়া ফুল সংগ্রহ করছেন এক চাষি। রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের দীঘলদী এলাকায়।  ছবি: দিনার মাহমুদ।
জমি থেকে ডালিয়া ফুল সংগ্রহ করছেন এক চাষি। রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের দীঘলদী এলাকায়। ছবি: দিনার মাহমুদ।
>

• ফুল ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা 
• এ বছর কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা 
• উপলক্ষ্য ভ্যালেন্টাইনস ডে ও মাতৃভাষা দিবস

চারদিকে যেখানেই চোখ যায়, ফুল আর ফুল। ফুটে আছে গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, গাঁদা, জারবেরা, জিপসি, কাঠমালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির নানান রঙের ফুল। বাতাসে ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে চারদিকে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে ফুল ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের বাম্পার ফলনে মুখে হাসি ফুটেছে চাষিদের। দামও মিলছে ভালো। এ বছর কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।

বন্দর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, দীঘলদী, মাধবপাশাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেড় শতাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করা হয়েছে। এ বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, দীঘলদী, মাধবপাশা, আরজাদি, ফেলারদী, আখতলা, মুখ কলদী, শেলসারদী ও বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ি, চিনারদী, মোল্লাবাড়ি, কলাবাগ, নবীগঞ্জ, তিনগাঁও এলাকায় জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা। ওই এলাকার জমিগুলোতে বিদেশি জারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চেরি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, হলুদ গাঁদা, গ্লাডিওলাস, চায়না গাঁদা, কাঠমালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ নানান প্রজাতির ফুল ফুটেছে। ফুলচাষিরা জমি ও বাগানে ফুলগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকেরা জানান, এ বছর ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় ফুলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। এ ছাড়া ফুলের বাজার চাঙা থাকায় তাঁরা খুশি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের দিকে কাঠমালতী ও গাঁদা ফুল দিয়ে বন্দর উপজেলার সাবদীতে ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে কৃষিজমিতে এই ফুল চাষ সম্প্রসারিত হতে থাকে। এখানকার প্রতিটি বাড়ির সীমানা, সড়কের দুপাশে কাঠমালতীসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে। ফুল চাষ করে স্থানীয় লোকজন এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।

এদিকে বন্দর উপজেলার সাবদীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ফুল দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর দর্শনার্থী ঘুরতে যান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা ফুলের বাগানে ঘুরে দেখেন।

মাধবপাশার জারবেরা ফুলচাষি আবদুল বাতেন বলেন, এবার তাঁর বাগানে ৫০ হাজারের বেশি জারবেরা ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিটি জারবেরা বিক্রি করছেন ৮ থেকে ১০ টাকায়। তাঁর ফুল রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।

দীঘলদী এলাকার ফুলচাষি নকুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, তিনি এবার ৪০ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস, জিপসি, চেরি, ডালিয়াসহ কয়েক প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন। একই এলাকার চাষি শতরঞ্জন বলেন, গত বছর ৩০ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করা হয়েছে। এ বছর ৫০ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ করা হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে।

ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ফুলের চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গ্লাডিওলাস প্রতিটি ১২ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ৮ থেকে ১০ টাকা, ডালিয়া প্রতিটি ১০ টাকা, জিপসি ৪০ টাকা আঁটি এবং চেরি ১০০টি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বন্দর উপজেলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন বলেন, সাবদী ও আশপাশের এলাকার মানুষ এখন বিভিন্ন ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল। ফুল চাষের সঙ্গে ৮ থেকে ১০ হাজার লোক জড়িত। সাধারণ যে চাষি তাঁরও ফুল চাষ থেকে বছরে আয় দুই লাখ টাকা। এখানকার উৎপাদিত ফুল ঢাকা, ফেনী, লাকসাম, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এবার ফুলের উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এ বছর কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে।’

 এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা এমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন দিবস, উৎসবসহ অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। ফুল চাষ করে দামও ভালো পান চাষিরা। চাষিদের প্রশিক্ষণ ও নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।