বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে আসবে

>
  • ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
  • ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে, তা বেশ বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে
  • বাণিজ্য, আর্থিক বাজার ও তেল খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে

এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমে আসবে বলে অনেক সংস্থাই পূর্বাভাস দিয়েছে। এবার দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলল, একদিকে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির শ্লথগতি এবং অন্যদিকে মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের বৃহত্তর প্রভাব—এসব কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২০১৮ সালের চেয়ে কমে আসবে। ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে এবার তা ২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

কজ ফর কানসার্ন? দ্য টপ টেন রিস্কস টু দ্য গ্লোবাল ইকোনমি ২০১৯ (উদ্বেগের কারণ? ২০১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির শীর্ষ ১০ ঝুঁকি) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব ঝুঁকির কথা বলেছে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। 

যে শীর্ষ ১০টি ঝুঁকির কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সেগুলো হলো: ১) মার্কিন-চীন বাণিজ্য সংঘাত ও পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনা, ২) মার্কিন করপোরেট ঋণজনিত মন্দার সম্ভাবনা, ৩) এর প্রভাবে উদীয়মান বাজারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা, ৪)  দীর্ঘ মেয়াদে চীনের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা এবং বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা, ৫) সরবরাহস্বল্পতার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা, ৬) দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে দ্বীপ নিয়ে দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা, ৭) সাইবার হামলা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগজনিত অন্তর্জালে অচলাবস্থার সম্ভাবনা, ৮) কোরীয় উপদ্বীপে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা, ৯) বিশৃঙ্খল ও চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা, ১০) রাজনৈতিক ও আর্থিক অস্থিতিশীলতাজনিত ইতালিতে ব্যাংকিং খাতে সংকট।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এ–ও বলেছে, প্রবৃদ্ধির প্রকৃত হার তাদের প্রাক্কলিত হারের চেয়েও কমে যেতে পারে। মূলত তিনটি কারণে এ রকম হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। প্রথমত, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে, তা বেশ বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বাণিজ্য, আর্থিক বাজার ও তেল খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে জনতুষ্টিবাদী এবং জাতীয়তাবাদী নেতাদের যেভাবে উত্থান হচ্ছে, তার পূর্ণ প্রভাব এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। বিভিন্ন দেশ সুরক্ষাবাদী নীতি গ্রহণ করছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যে যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এর সঙ্গে বড় বড় অর্থনীতিতে বেশ কিছু অভিঘাতও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইতালির বিপুল ঋণভার। তার সঙ্গে উদীয়মান বাজারে ঋণ বাড়ছে, যারা বৈশ্বিক বাণিজ্য ও পুঁজিপ্রবাহের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে আছে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের আশঙ্কা, এসব ঠিকঠাক সামলানো না গেলে পতন একবার শুরু হলে তা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

শেষত, বৈশ্বিক ক্ষমতাকাঠামোতে যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আসছে অর্থাৎ চীনের উত্থান হচ্ছে, তাতে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। সীমানা ও ভূমি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে পরিস্থিতি জটিলতর হচ্ছে। এসব ঝুঁকির মুখে নীতিপ্রণেতাদের নানা বিকল্প তৈরি করে রাখতে হবে। এতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমে আসবে।

প্রতিবেদনে ঝুঁকির ক্রম তৈরির পাশাপাশি তার মাত্রাও উল্লেখ করা হয়েছে। শীর্ষ ঝুঁকি বা মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনার তীব্রতা ১৫। দশম ঝুঁকি ইতালির ব্যাংকিং সংকটের তীব্রতার মাত্রা ৪।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বিশ্বায়নবিরোধী তৎপরতার সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, জাতীয়তাবাদী ও জনতুষ্টিবাদী ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার(ডব্লিউটিও) মতো বাণিজ্যের যে বহুপক্ষীয় সংস্থা গড়ে উঠেছিল, তা হুমকির মুখে পড়বে। এতে উদীয়মান দেশগুলোর বেশি ক্ষতি হবে।