শিল্পনগর স্থাপনের মতো সক্ষমতা বিসিকের নেই

>

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাসায়নিক গুদাম সরানো নিয়ে সব মহলে আলোচনা হচ্ছে। আশপাশের আবাসিক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তরের বিষয়টিও নতুন করে সামনে এসেছে। সে বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার

মো. জসিম উদ্দিন, সভাপতি, বিপিজিএমইএ
মো. জসিম উদ্দিন, সভাপতি, বিপিজিএমইএ

প্রথম আলো: পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে অনেক প্লাস্টিক কারখানা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানাগুলো সাংঘাতিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। গত বছর গড়ে প্রতি মাসেই একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগেছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

জসিম উদ্দিন: গত শতাব্দীর ষাটের দশকে প্লাস্টিকশিল্প পুরান ঢাকায় শুরু হয়। বড় কারখানাগুলো ধীরে ধীরে অন্যত্র সরে গেলেও ছোটগুলো সেখানে রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আছে পাইকারি বাজার, কাঁচামালের দোকান ও গুদাম। পুরান ঢাকার কারখানাগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। সেগুলোকে একটি পরিকল্পিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু বছর ধরে আমরা বলে আসছি। কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে প্লাস্টিক শিল্পনগর করার জন্য ১০-১২ বছর আগে বিসিকের সঙ্গে আমরা সমঝোতা চুক্তি করি। তবে কাজের অগ্রগতি খুবই কম। নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর দাহ্য রাসায়নিক হিসেবে চিহ্নিত ২৯টি কেমিক্যালের মধ্যে প্লাস্টিকের নাম নেই। যখনই আগুন লাগে, তখনই আমরা সবাই সোচ্চার হই। কেমিক্যাল, দাহ্য পদার্থ, প্লাস্টিক কারখানা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। তবে শেষ পর্যন্ত কার্যকর কিছু হয় না।

প্রথম আলো:  দীর্ঘদিনেও কেন প্লাস্টিক শিল্পনগর হলো না। দায় কার?

জসিম উদ্দিন: মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে প্লাস্টিক শিল্পনগর করার দায়িত্ব নিয়েছে বিসিক। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১০-১২ বছরে তিনবার এমওইউ করেছে সংস্থাটি। তবে কাজটি এত দিনেও শেষ করতে পারেনি বিসিক। সে জন্য বিসিকই দায়ী। ২০১৬ সালে প্লাস্টিক শিল্পনগর প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। তহবিলও পাওয়া গেছে, তবে জমি অধিগ্রহণ হয়নি। শুনেছি, কয়েক দিন আগে জমি মাপজোখ করতে পেরেছে তারা। তবে সেখানে জমি হচ্ছে মাত্র ৫০ একর। পুরান ঢাকার ক্লাস্টারটি সরাতে ৫০ একর জমিতে হবে না। তারপরও আমরা চাই শিগগিরই শিল্পনগরটি হোক।

প্রথম আলো: শিল্পনগর হলেও ছোট কারখানাগুলো সেখানে যেতে পারবে? তাদের সেই আর্থিক সক্ষমতা কি আছে?

জসিম উদ্দিন: সেই প্রশ্নটি বহু আগেই উঠেছে। সে জন্য পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা বসেছি ও তাঁদের কাছে আবেদনপত্র চেয়েছি। আমরা দেখেছি, শিল্পনগরে যাওয়ার বিষয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। কাজটি দুভাবে হয়তো করতে হতে পারে। মাঝারি শিল্প মালিক যাঁরা আছেন, তাঁরা প্লট নেবে। আর ছোট কারখানার জন্য আমরা সমিতির পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে কয়েকটি প্লট একসঙ্গে করে ১০-২০ কারখানার মধ্যে ভাগ করে দেব। এই রকম একটি পরিকল্পনা আমাদের আছে। তাতে করে ছোট কারখানাগুলোর ওপর চাপটা কম আসবে।

প্রথম আলো: শিল্পনগরের ৫০ একর জায়গায় পুরান ঢাকার কত কারখানার জায়গা হবে?

জসিম উদ্দিন: ১০০-১৫০ কারখানার বেশি স্থানান্তর করা যাবে না।

প্রথম আলো: পুরান ঢাকায় কত কারখানা আছে?

জসিম উদ্দিন: অনেক কারখানা। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কারখানার ওপরে হবে।

প্রথম আলো: তাহলে তো অধিকাংশ কারখানাই সরানো যাবে না…

জসিম উদ্দিন: হ্যাঁ। কারখানা ছাড়াও তো প্লাস্টিকের কাঁচামালের ব্যবসা ও গুদাম, রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি পুরান ঢাকায় আছে। ইসলামবাগের অধিকাংশ ভবনই প্লাস্টিক কারখানার দখলে। কারখানা স্থানান্তরে জায়গা দিতে না পারলে ইসলামবাগের বাসাবাড়ি উঠিয়ে সেই এলাকাকে প্লাস্টিক শিল্পনগরী হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। মানে আমি বলতে চাইছি, হয় বাসাবাড়ি উঠান, না হয় কারখানাগুলো সরান। যেকোনো একটি তো করতে হবে।   

প্রথম আলো: বিসিক যতগুলো শিল্পনগর করার উদ্যোগ নিয়েছে, সবগুলো দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ে গেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের সক্ষমতার কি কোনো ঘাটতি আছে?

জসিম উদ্দিন: বিসিক আগে সারা দেশে যেভাবে কাজ করেছে, সেভাবে বর্তমানে করতে পারছে না। বিসিকের কাঠামোই আসলে সে রকম। তা ছাড়া শিল্পনগর স্থাপন করার কাজ শিল্প মন্ত্রণালয়ের না। নিজেদের কলকারখানা দেখভাল করাই বর্তমানে তাদের মূল কাজ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) হওয়ার পর শিল্প মন্ত্রণালয়েরও গুরুত্ব কমে গেছে। আমি মনে করি, শিল্পনগর স্থাপনের কাজ বেজার কাছে চলে যাওয়া উচিত। বিসিকের সেই সক্ষমতা নেই।

প্রথম আলো: পুরান ঢাকার কারখানাগুলো স্থানান্তর করলে ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি রপ্তানিতে কি কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে?

জসিম উদ্দিন: যারা রপ্তানি করছে তারা উন্নত কর্মপরিবেশে কারখানা স্থাপন করে নিয়েছে। পুরান ঢাকার কারখানাগুলো অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটায়। তবে কারখানাগুলো পরিকল্পিত জায়গায় স্থানান্তর করা গেলে তারাও রপ্তানি করতে পারবে। এতে ৫০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এই টাকা তো সরকারের জন্য কোনো ব্যাপারই না। এখন সময় এসেছে, যথাযথ পরিকল্পনা করে সেই পরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়ন করার।