রংপুরে আরওপি স্ক্রিনিং সেন্টার ও দৃষ্টিকর্নার উদ্বোধন
প্রথমবারের মতো রংপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয় চত্বরে দৃষ্টিকর্নার স্থাপন এবং খুদে চিকিৎসক ও শিক্ষকমণ্ডলীদের প্রাথমিক চক্ষু পরিচর্যা–বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতা ও ন্যাশনাল চাইল্ডহুড ব্লাইন্ডনেস প্রোজেক্টের আওতায়, রংপুর জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য চক্ষুসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশন, রংপুরের উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
গতকাল শনিবার (২ মার্চ) রংপুরে এ কার্যক্রম পরিদর্শন এবং বাবুখাঁ উচ্চবিদ্যালয়, রংপুরে একটি দৃষ্টিকর্নার উদ্বোধন করেন অরবিস ইন্টারন্যাশনালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা ক্রিস্টি ডি-ককার (আমেরিকা), দাতা উন্নয়ন পরিচালক এলিজাবেথ হরেল (আমেরিকা), দাতা উন্নয়ন সহযোগী এলেনা স্যাক্সটন (অস্ট্রেলিয়া), অরবিস ইন্টারন্যাশনাল কানাডার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিসা ম্যাককিন, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহসিনা আফরোজ এবং দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহমুদুল ইসলাম ডিউক।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাবুখাঁ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসলে হক, বাবুখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. মনজিয়া বেগমসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী, স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ও প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এ কে এম ফিরোজ আলম সাইফুল্লাহ। অনুষ্ঠানের শেষে দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশনের হেড অব এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং ডা. মো. সাজিদুল হক তানযীল ‘প্রাথমিক চক্ষু পরিচর্যা এবং দৃষ্টিকর্নার ব্যবহার’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন। এতে আটজন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ৩২ জন ছাত্রছাত্রীকে খুদে চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০০ ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক চক্ষু পরিচর্যা–বিষয়ক সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশ্নোত্তরপর্বের মাধ্যমে বিজয়ী ১০ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়।
আলোচনাপর্বে উঠে আসে, রংপুর জেলায় ০-১৬ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ (প্রাক্কলিত), যাদের অধিকাংশ দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে শহরাঞ্চলের মানসম্মত প্রতিষ্ঠান থেকে চক্ষু চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। এ অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রছাত্রীদের চক্ষুবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি এবং দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয় চত্বরে ‘দৃষ্টিকর্নার’ স্থাপন, ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালে কর্মকর্তারা দৃষ্টিকর্নার উদ্বোধনের পর দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশন, দর্শনা, রংপুরে উত্তরবঙ্গে নবজাতক শিশুদের জন্য প্রথমবারের মতো একটি ROP (রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি) স্ক্রিনিং সেন্টার উদ্বোধন করে। এখানে উল্লেখ্য, ROP অপরিণত নবজাতক শিশুর চক্ষুজনিত একটি মারাত্মক সমস্যা। যেসব শিশু ৩৫ সপ্তাহ আগে জন্মগহণ করে এবং যাদের ওজন ২ কেজির কম, তাদের চোখে আরওপি সৃষ্টির কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ ও ক্ষত সৃষ্টি হয়, যার পরিণামে শিশুর অন্ধত্ব ডেকে আনে। দীপ আইকেয়ার ফাউন্ডেশনে, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় স্থাপিত এই আরওপি স্ক্রিনিং সেন্টার অত্র অঞ্চলের অপরিণত নবজাতক শিশুর সঠিক সময়ে চক্ষু পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুকে আরওপিজনিত অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।