পাইকারি বাজারে জিরার দাম কমছে

>

• চিকন জিরার দরপতন চলছে
• দাম প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে
• কেজিপ্রতি কমেছে ৩৫ টাকা

পাইকারি বাজারে মসলাজাতীয় পণ্য চিকন জিরার দরপতন চলছে। এক মাসের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। কেজিপ্রতি কমেছে ৩৫ টাকা। চাহিদার অতিরিক্ত আমদানি ও বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রভাবে পাইকারি বাজারে জিরার দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। আবার ভারত থেকে অবৈধভাবে জিরা বাজারজাত হওয়ায় পাইকারি বাজারে বেচাকেনা কমে দাম পড়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জের পাইকারি বাজারে সপ্তাহের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার ভারত থেকে আমদানি হওয়া প্রতি কেজি জিরা বেচাকেনা হয়েছে ২৯৫ টাকা। এক মাস আগেও এই জিরা বিক্রি হয়েছিল ৩৩০ টাকা।

জিরার বাজারে এই দরপতনকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, খাতুনগঞ্জ থেকে সারা দেশে জিরা সরবরাহ হতো। কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন সেভাবে জিরা কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে জিরার এত দরপতন হওয়ার কথা নয়।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মিষ্টি জিরার ঘোষণায় চিকন জিরা আমদানি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুল্ক ফাঁকি দিতে এভাবে কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণায় চিকন জিরা আমদানি করায় জিরার বাজার পড়ে গেছে। সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা ও বৈধ ব্যবসায়ীরা যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেন সেজন্য নজরদারি বাড়ানো উচিত।

গত অর্থবছরে আমদানির হিসাবে দেখা যায়, মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে জিরার বাজারের আকার প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বছর তিনেক আগেও ভারত থেকে চোরাইপথে জিরা এনে পাইকারি বাজারে সরবরাহ করত চোরাকারবারিরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পর চোরাইপথে জিরা আসা বন্ধ হয়। এ অবস্থা ছিল ২০১৩–১৪ অর্থবছর পর্যন্ত। এরপর ২০১৫–১৬ অর্থবছর থেকে বৈধভাবে জিরা আমদানি বাড়তে থাকে। ওই সময় বন্দর দিয়ে ১৪ হাজার ২৪২ টন জিরা আমদানি হয়। ২০১৬–১৭ অর্থবছরে জিরা আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ হাজার টনে। গত অর্থবছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ২৩৯ টনে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে আমদানি হয় ১৫ হাজার ৮৭৮ টন।

ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন জিরা আড়াই হাজার ডলার থেকে ধাপে ধাপে কমে দুই মাসের ব্যবধানে এখন ২ হাজার ২০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আবার দেশে জিরার সরবরাহও বেশি। রোজা সামনে রেখে জিরা আমদানিও বেড়েছে। বিশ্ববাজারে দাম কম এবং দেশে সরবরাহ বাড়ায় মূলত জিরার দাম কমেছে। এখন যদি অবৈধপথে আসা জিরা বাজারজাত হয় তাহলে এই পণ্যটির বৈধ আমদানিকারকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

জানতে চাইলে আছদগঞ্জের জাফর মার্কেটে ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জিরা আমদানিতে যে খরচ পড়ছে প্রায় একই দামে এখন পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কমলে লোকসান গুনতে হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে উৎপাদন না হওয়ায় আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হয় মসলাজাতীয় এ পণ্যটির। সিরিয়া থেকে একসময় বেশি জিরা আমদানি হতো। তবে সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারত থেকে জিরা আমদানি বেড়েছে। সিরিয়া ও তুরস্কের ফলন এখনো আসেনি। আগামী জুলাই মাসে সিরিয়ায় জিরার নতুন ফলন উঠবে। পরের মাসে তুরস্কে আসবে নতুন ফলন।