ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন সহজ করতে হবে

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে অর্থায়ন সহজতর করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সহায়ক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন। এ ছাড়া বিকল্প সরবরাহ মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। কারণ বর্তমানে দেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ।
‘অ্যাডভান্সিং সলিউশন থ্রো ইনোভেটিভ এমএসই ফাইনান্সিং প্রোডাক্টস অ্যান্ড ডেলিভারি চ্যানেলস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। বিজনেস ফাইন্যান্স ফর দ্য পুওর ইন বাংলাদেশ (বিএফপি-বি) এর আয়োজন করে। বিএফপি-বি প্রকল্পটি যুক্তরাজ্য সরকারের ইউকে এইড/ডিএফআইডি অর্থায়নকৃত। রাজধানী লেকশোর হোটেলে আজ মঙ্গলবার আয়োজিত সেমিনারের প্যানেল আলোচক ছিলেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য গকুল চাঁদ দাস, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জালালুল আজিম ও বিডি ভেঞ্চারের এমডি শওকত হোসেন। প্যানেলটি সঞ্চালনা করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী।

আলোচনায় গকুল চাঁদ দাস বলেন, বাংলাদেশ যেসব ক্ষুদ্র ঋণের পথ প্রদর্শক, ঠিক তেমনি বিমা খাতেরও। ১৯৩৮ সাল থেকে এ অঞ্চলে বিমা চালু আছে। তিনি বলেন, দেশের বিমা খাতের উপযুক্ত লোকবল নেই। মানুষের মধ্যেও সচেতনতা নেই। দেশে অ্যাকচুয়ারি আছেন মাত্র ৩ জন। তাঁরা সবাই ৭৫-ঊর্ধ্ব। এর মধ্যে দুজন বিদেশে থাকেন। বিমার টাকা ফেরত দেওয়ার চেয়ে গোয়েন্দাগিরি বেশি হয়। এ কারণে মানুষ বিমা করতে আগ্রহী হয় না।
প্রগতি লাইফের এমডি জালালুল আজিম বলেন, দেশে ৭৮টি বিমা প্রতিষ্ঠান, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় ৭৮ জন দক্ষ কর্মীও নেই। এটাই বাস্তবতা। তবে কাজ শুরু হয়েছে। সামনে বড় অংশই বিমার আওতায় আসবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ করছি। গ্রামীণফোন ও পাঠাওয়ের সঙ্গে কাজ হচ্ছে। স্বল্প সময়ে আমরা দাবি পরিশোধ করছি। এসব চর্চা ছড়িয়ে পড়বে।’
বিডি ভেঞ্চারের এমডি শওকত হোসেন বলেন, বর্তমানে যে কেওয়াইসি (গ্রাহক পরিচিতি ফরম) প্রথা চালু আছে, তা খুবই বড়। এ জন্য সময় এসেছে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি প্রণয়নের। এ জন্য নির্বাচন কমিশন ও মোবাইল অপারেটরদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তাদের কাছে সব গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ রয়েছে।

বিএসইসি কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, বিকল্প বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করবে। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বিকল্প লেনদেন বোর্ড চালু হবে, যাতে অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হবে। দেশে বন্ড বাজার এখনো উন্নত হয়নি, এ জন্য কাজ হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের জন্য প্রয়োজনে বিধি পরিবর্তন আনতে হবে, নতুন নীতি তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএফপি-বির পক্ষে গবেষণা ফলাফল উত্থাপন করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও সহায়ক নীতিমালার কথা বলেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র বিমা পণ্যের জন্য বিমা আইনের সংশোধন, ইলেকট্রনিক কেওয়াইসির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ছোট আকারের অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দেন।
অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. নাজিমউদ্দীন, মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত, ডিএফআইডি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা আফসানা ইসলাম, বিএফবি-বি প্রকল্পের টিম লিডার ফয়সাল হোসেন প্রমুখ।