নতুন ভবনে যাচ্ছে বিজিএমইএ

জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তাই ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবনটি ছাড়তে হবে বিজিএমইএকে।  ফাইল ছবি
জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তাই ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবনটি ছাড়তে হবে বিজিএমইএকে। ফাইল ছবি
>

* উত্তরায় ১৩ তলা ভবনের ৫ তলা নির্মাণকাজ শেষ
* আগামী ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন

অবশেষে রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের ওপর নির্মিত বিতর্কিত ভবন ছাড়ছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। উত্তরায় ১১০ কাঠা জমির ওপর ১৩ তলা (পার্কিংয়ের জন্য ভূগর্ভস্থ দুই তলা ছাড়া) বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির উদ্বোধন করবেন।

জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভেঙে ফেলতে হবে। আগামী ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবনটি ছাড়তে হবে। এই ভবনের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে উত্তরা তৃতীয় পর্বে ১১০ কাঠা জমি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে অর্ধেক মূল্যে কিনে নেয় বিজিএমইএ।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল বর্তমান কার্যালয়ের জিনিসপত্র উত্তরার নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। ১৫ এপ্রিল থেকে আমরা সেই ভবনে অফিস করব। বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতা সনদ (ইউডি) উত্তরার নতুন ভবন থেকে নিতে হবে।’ তিনি জানান, নতুন ভবনের নির্মাণ ব্যয় প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা।

উত্তরায় বিজিএমইএর নতুন ভবনে দুটি টাওয়ার হবে। সেখানে মোট জায়গার (স্পেস) পরিমাণ ৪ লাখ ৬৪ হাজার বর্গফুট। তার মধ্যে ৩ লাখ বর্গফুট নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখছে বিজিএমইএ। বাকি জায়গা ২৩টি প্রতিষ্ঠান কিনেছে। তবে এখনো ৫০ হাজার বর্গফুট জায়গা বিক্রির জন্য রয়েছে। ভবনটিতে প্রদর্শনী কেন্দ্র, ৭৫০ জন মানুষ ধারণক্ষমতার আধুনিক মিলনায়তন, দুটি সেমিনার কক্ষ এবং সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিংপুলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে।

উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের নকশা
উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের নকশা

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।

কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দুটি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দুটি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তবে আইনি জটিলতার কারণে তাদের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ভবনের ওপরের দুই তলা নিয়ে বিলাসবহুল ‘অ্যাপারেল ক্লাব’ করা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট, সভাকক্ষ আছে। বড় আকারের একটি মিলনায়তনও আছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘বর্তমান ভবনে যেসব প্রতিষ্ঠানের জায়গা আছে, তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নতুন ভবনে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই বর্তমান ভবনটি ছাড়ার বিষয়টি জানে। সবাই মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তারপরও আমরা দু–এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেব।’

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী যা যা করণীয় তা করা হবে।’