বাজেট বাস্তবায়নে ৯ বাধা

দেশে কোনো অর্থবছরেই প্রস্তাবিত বাজেটের পুরোটা বাস্তবায়িত হয় না। এ জন্য মাঝপথে বাজেট সংশোধন করা হয়। সেই সংশোধিত বাজেটও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় না। বাজেট বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য ৯টি বাধা চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। একই সঙ্গে বিভাগটি ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের একটি চিত্র তৈরি করেছে।

অর্থ বিভাগ বাজেট বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য যেসব বাধা চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে ছয়টি বাধা উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। আর বাকি তিনটি রাজস্ব বাজেট বাস্তবায়নের বাধা। উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে যথাসময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারা, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা, প্রকল্প দলিলের অসম্পূর্ণতা ও বারবার প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন বা সংশোধন।

এ ছাড়া রাজস্ব বাজেট বাজেট বাস্তবায়নের পথে যে তিনটি বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়া, জনবল নিয়োগে জটিলতা ও সময়মতো নিয়োগ না হওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে সুবিধাভোগী নির্বাচনে বিলম্ব।

আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার।

বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্বে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ৯টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করলেও সেগুলো দূর করার কোনো উপায় চিহ্নিত করেনি। অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে এসেছে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় মোট বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৪ দশমিক ৫ থেকে ৯২ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। আর এডিপির ব্যয় ছিল ৮৯ দশমিক ৯ থেকে ৯৩ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারার পাশাপাশি ভূমির মালিকানা ও রেকর্ড বিষয়ক জটিলতাও রয়েছে। রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতাও প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। পিডিদের একটি পুল থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। আবার রয়েছে জনবল নিয়োগবিষয়ক জটিলতা। প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি, সম্ভাব্যতা যাচাই ও দরপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়ায়ও অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়।

অর্থ বিভাগের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা প্রকল্প দলিলের অসম্পূর্ণতা। যেমন দেখা যায়, ভবন তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও আসবাব বা যন্ত্রপাতি কেনার সংস্থান নেই। ফলে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়। আবার, বারবার নকশা পরিবর্তন বা সংশোধনও প্রকল্প বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অর্থবছরের শুরুতে অর্থ ছাড়ে দেরি করে। এতে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। জনবল নিয়োগে জটিলতা এবং সময়মতো নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না করায় অনুন্নয়ন খাতে আশানুরূপ বাজেট বাস্তবায়িত হয় না।