রানা প্লাজা ধসের ৬ বছর : আহতেরা কেমন আছেন?

রানা প্লাজা। ফাইল ছবি
রানা প্লাজা। ফাইল ছবি

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত পোশাকশ্রমিকের ৫১ শতাংশ বর্তমানে বেকার। তাঁদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ শারীরিক ও ২৭ শতাংশ মানসিক দুর্বলতার কারণে কাজ করতে পারছেন না। তবে আহত শ্রমিকদের ৪৯ শতাংশ পোশাক কারখানায়, টেইলারিং, দিনমজুরি, কৃষিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। তাঁদের কেউ কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসাও করেন।

রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের জরিপে আহত শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা ইত্যাদি তথ্য উঠে এসেছে। তবে জরিপে বলা হয়েছে, শারীরিক অবস্থার কারণে আহত শ্রমিকেরা একটানা কাজ করতে পারেন না। সে জন্য ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করেন। তাই শ্রমিকদের এই বেকারত্ব অস্থায়ী। অবশ্য দুই বছর আগেও আহত শ্রমিকদের ৪৮ শতাংশ বেকার ছিলেন। তার মানে দুই বছরের ব্যবধানে আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার কিছুটা বেড়ে গেছে।

রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক নুজহাত জেবিন। তিনি জানান, আহত ২০০ শ্রমিকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে চলতি বছর জরিপটি করা হয়েছে।

জরিপে উঠে এসেছে, আহত সাড়ে ২০ শতাংশ শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। তাঁরা মাথাব্যথা, হাত-পায়ে ব্যথা ও কোমরব্যথায় ভুগছেন। সাড়ে ২৮ শতাংশের অবস্থা ভালো। বাকি ৫১ শতাংশ শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। তবে প্রায়ই তাঁরা নানা সমস্যায় ভোগেন। আবার সাড়ে ১০ শতাংশ শ্রমিক মানসিকভাবে সুস্থ নন। সাড়ে ৬৮ শতাংশ শ্রমিকের মানসিক অবস্থা কমবেশি স্থিতিশীল। আর ২১ শতাংশ শ্রমিক মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন।

আহত শ্রমিকদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ পুনরায় পোশাক কারখানার কাজে ফিরে গেছেন। তবে ২ শতাংশ শ্রমিক দিনমজুরি করছেন। আড়াই শতাংশ শ্রমিক বাসাবাড়ির কাজ করছেন। এ ছাড়া অনেকে টেইলারিং, কৃষি ও বিক্রয়কর্মীর কাজ করছেন।

জরিপের তথ্যানুযায়ী অধিকাংশ শ্রমিক পরিবারের মাসিক আয় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। ২১ শতাংশ শ্রমিক পরিবারের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। অবশ্য ২০ শতাংশ শ্রমিক পরিবারের আয় ৫ হাজার টাকার নিচেই রয়ে গেছে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ১ হাজার ১৩8 জন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। আহত হন অনেকে। সে সময় ১ হাজার ৪০০ আহত শ্রমিকের একটি তথ্যভান্ডার করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। প্রতিবছরই সেই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করছে সংস্থাটি।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে গতকাল অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় সাংসদ, কূটনীতিক, গবেষক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতারা আলোচনায় অংশ নেন। রানা প্লাজা ধসের পর কর্মপরিবেশ উন্নয়নসহ শ্রমিকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেওয়া উদ্যোগগুলো প্রাতিষ্ঠানিক করার ওপর জোর দেন তাঁরা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক করার বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ছয় বছর পর মনে হচ্ছে সেগুলোর গতি মন্থর হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, আমরা আগেই ভালো ছিলাম। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কথা ছিল, রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড যে মডেলে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, তা অনুসরণ করা হবে। তবে সেই আলোচনাও হঠাৎ থেমে গেছে। তা ছাড়া ইনজুরি স্কিম নিয়েও কোনো কথাবার্তা নেই।’

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তুমো পুতিয়েনাইন বলেন, উদ্যোগগুলো প্রাতিষ্ঠানিক করা খুবই জরুরি। সমন্বিত উদ্যোগের অনেক অভাব আছে। কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিনি ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

আরও বক্তব্য দেন সাংসদ শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।