সহজ প্রযুক্তি খরচ কমাবে

কোনো দেশে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা বা ফাইভ-জি চালু করতে পুরো প্রযুক্তি সেবা নিয়ে এসেছে চীনের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের প্রযুক্তি সহজ এবং সময় ও ব্যয়সাশ্রয়ী।

হুয়াওয়ের বার্ষিক বিশ্লেষক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার কয়েকটি অধিবেশনে ফাইভ-জি প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির প্রযুক্তিবিদেরা। চীনের শেনজেন শহরে গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া তিন দিনের এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭৫০ জনের বেশি প্রযুক্তি বিশ্লেষক, আর্থিক বিশ্লেষক, টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিনিধি ও সংবাদকর্মী অংশ নিয়েছেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সকালে হুয়াওয়ে তাদের ফাইভ-জি প্রযুক্তির ক্লাউড কোর নেটওয়ার্কের প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি তুলে ধরে। প্রতিষ্ঠানটির স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড বিজনেস বিভাগের প্রেসিডেন্ট জেসন দাই বলেন, হুয়াওয়ে এমন প্রযুক্তি দিচ্ছে, যেখানে ফাইভ-জিতে যেতে গ্রাহককে মুঠোফোন নম্বর পাল্টাতে হবে না। হুয়াওয়েই প্রথম এ সুবিধা চালু করেছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো একসঙ্গে টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি ও ফাইভ-জি চালাতে পারবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের অবকাঠামো ও নকশা তুলে ধরে জেসন দাই বলেন, এটা বসাতে সময় কম লাগবে। এমন ভাবে নতুন প্রযুক্তির নকশা করা হয়েছে, যা দক্ষতার সঙ্গে খুবই ভালো সেবা দেবে। ফাইভ-জিতে ব্যান্ডউইটথের ব্যবহার অনেক বাড়বে। পাশাপাশি টাওয়ারের বিদ্যুৎ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে জানায় হুয়াওয়ে। অবশ্য এর একটা সমাধান নিয়ে এসেছে তারা।

টেলিযোগাযোগ খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে অপর এক অধিবেশনে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে নতুন মুঠোফোন টাওয়ার প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, তারা যার নাম দিয়েছে হুয়াওয়ে ফাইভ-জি পাওয়ার সলিউশন। প্রতিষ্ঠানটির টেলিকম টাওয়ার এনার্জি বিভাগের প্রেসিডেন্ট পেং জিয়ানহুয়া বলেন, নকিয়ার ফিচার ফোন থেকে উন্নত হয়ে মুঠোফোন এখন স্মার্টফোন হয়েছে। কিন্তু টাওয়ারের উন্নতি হয়নি। তিনি বলেন, ফাইভ-জিতে প্রতিটি টাওয়ারে বিদ্যুৎ ব্যবহার দাঁড়াবে ১১ হাজার ৫৭৭ ওয়াট, যা ফোর-জির প্রায় দ্বিগুণ। এ ক্ষেত্রে কোনো অপারেটর যদি হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাহলে তার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমবে ৪০ শতাংশ। সব মিলিয়ে সময় বাঁচবে ৩০ শতাংশ।

পেং জিয়ানহুয়া আরও বলেন, নতুন প্রযুক্তিতে টাওয়ারগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এতে টাওয়ারে কোনো সমস্যা হলে তা সহজেই শনাক্ত করা যাবে। ফলে প্রকৌশলীদের টাওয়ারে গিয়ে হাতড়াতে হবে না। এতে সময় ও খরচ বাঁচবে।

নতুন প্রযুক্তিতে টেলিকম অবকাঠামোর ব্যাটারি অফপিক আওয়ারে চার্জ হবে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি খুব সহজে বোঝা গেলেও সেবা নির্বিঘ্ন রেখে বাস্তবায়ন কঠিন। হুয়াওয়ে তা সম্ভব করেছে।

ফাইভ-জিতে বাড়তি ব্যান্ডউইটথ ও বাড়তি চাপ সামলাতে শক্তিশালী কম্পিউটার লাগবে। সেটাও এনেছে হুয়াওয়ে। গতকাল তারা নতুন কম্পিউটিং প্রযুক্তি এটলাস এআই কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম বাজারে ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এতে ব্যবহার করা হয়েছে হুয়াওয়ে এসেন্ড সিরিজ এআই প্রসেসর, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নতুন এই কম্পিউটিং প্রযুক্তি স্মার্ট সিটি, টেলিযোগাযোগ খাত, আর্থিক খাত, উচ্চগতির ইন্টারনেট, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত মানের সেবায় ব্যবহার করা যাবে।

বিশ্বের পাঁচটি কোম্পানি ফাইভ-জি প্রযুক্তি তৈরি ও সরবরাহ করে, যাদের মধ্যে হুয়াওয়ে সবার ওপরে।