জলবায়ু পরিবর্তনে কোন ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই বিশ্বের ওপর পড়তে শুরু করেছে। ছবি: রয়টার্স
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই বিশ্বের ওপর পড়তে শুরু করেছে। ছবি: রয়টার্স

জলবায়ু পরিবর্তনের আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে কড়া সতর্ক করেছেন দুই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান। যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি ও ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফ্রাঙ্কো ভিলেরোয় দে গালাউ এক খোলা চিঠিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে অশনিসংকেত দিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, যদি কোনো কোম্পানি বা শিল্প এই নতুন জগতের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।

এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন জলবায়ুভিত্তিক সংস্থা নেটওয়ার্ক ফর গ্রিনিং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের (এনজিএফএস) প্রধান। এনজিএফএস ২০১৭ সালে গঠিত ৩৪টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি জোট। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জলবায়ু পরিবর্তনের আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গত বুধবার প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই সংস্থা। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

বুধবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে ওই চিঠি প্রকাশ করা হয়। এতে কার্নি ও ভিলেরোয় দে গালাউ ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক প্রভাব’ বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এর মধ্যে বিশ্বের ওপর পড়তে শুরু করেছে। যেমন উত্তর আমেরিকার দাবদাহ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঝড়, আফ্রিকায় ও অস্ট্রেলিয়ার খরা। তাঁরা বলছেন, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অবকাঠামো ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যে, কমছে উৎপাদনশীলতা এবং ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ।

এনজিএফএস এই ঝুঁকিকেই তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে। ‘কল টু অ্যাকশন’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যাপক অভিবাসন সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও যুদ্ধের মতো বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই ২০১৫ সালে বিশ্বনেতারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩ দশমিক ৬ ফারেনহাইট) নিচে রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁরা। তবে প্রতিটি দেশই আলাদা আলাদা ঝুঁকিতে আছে।

আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার খরায় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার খরায় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

তিন ধরনের ঝুঁকির কথা বলছে এনজিএফএস। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও সরকারকে এই ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। এক, শারীরিক ক্ষতি—এই ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে আমরা দেখতে পাই। যেমন ঝড়, খরায় ব্যাপক শস্যহানি ঘটে। দুই, অবস্থার পরিবর্তন—যখন কোনো ব্যবসাকে হঠাৎ করে কার্বন ঘনীভূত শিল্প ও প্রযুক্তি থেকে সরিয়ে ফেলা হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়, তখন ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ে ওই প্রতিষ্ঠান। তিন, দায়বদ্ধতা—যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির মুখে পড়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করে, তখন বিমা কোম্পানিগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে।

কার্নি ও ভিলেরোয় দে গালাউ তাঁদের চিঠিতে আরেকটি বিশেষ ঝুঁকির কথা বলেছেন, সেটি হলো যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই সবুজ অর্থনীতিতে স্থানান্তর হওয়া। তাঁরা বলেন, কার্বন নিঃসরণ ২০১০ সালে যে অবস্থায় আছে, আগামী এক দশকের মধ্যে তার থেকে ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ এটি শূন্য শতাংশে পৌঁছাবে। আর জন্য মূলধনের পুনঃস্থাপন করতে হবে।

এনজিএফএস বলছে, যখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, একটি আকস্মিক পরিবর্তন আর্থিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির ওপর বিস্তৃত প্রভাব ফেলে।

ঝুঁকি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানেরা পরামর্শও দিয়েছেন। কোম্পানিগুলোকে প্রতিদিনের কাজ তত্ত্বাবধান করে, আর্থিক স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণ এবং আর্থিক ঝুঁকিগুলোর পর্যবেক্ষণ করে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা।