কৃষকদের সঞ্চয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এল 'প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং'

কৃষকদের সঞ্চয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এলো ‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’।
কৃষকদের সঞ্চয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এলো ‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’।

দেশের প্রতিটি কৃষককে জাতীয় অর্থনীতিতে সংযুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে সুপার শপ স্বপ্ন এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) যৌথভাবে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করল ‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’। এর মাধ্যমে দেশের দরিদ্র কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য স্বপ্নের কাছে বিক্রি করে সেই টাকা নিজ নিজ ইউক্যাশ অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারবেন। এতে করে তাঁদের মাঝে গড়ে উঠবে সঞ্চয়ের প্রবণতা। এটি ভবিষ্যতে তাঁদের জীবনযাপনে আনবে নতুন মাত্রা।

সম্প্রতি যশোরের পীরের হাট এবং শাহবাজপুর গ্রামে হয়ে গেল প্রজেক্টটির পাইলট প্রকল্প। এই প্রজেক্টের আওতায় কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ‘অ্যাগ্রো ব্যাংকিং প্রজেক্ট’–এর কালেকশন পয়েন্টে নিয়ে আসে। সেখানে সুপার শপ স্বপ্ন তাদের নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্যগুলো কিনে নেয়। স্বপ্নের কাছে বিক্রীত পণ্যের দাম সরাসরি জমা হয়ে যায় কৃষকদের ইউক্যাশ অ্যাকাউন্টে, আর তাঁদের উৎপাদিত পণ্যগুলোই হয়ে যায় তাঁদের সঞ্চয়।

কৃষকদের কাছ থেকে সংগৃহীত এই সতেজ পণ্যগুলো স্বপ্নের কর্মীরা তাঁদের আউটলেটে সরবরাহ করেন, যা দ্রুত সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যায় সারা দেশের ভোক্তাদের দোরগোড়ায়। ‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’ প্রসঙ্গে স্বপ্নের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা তাজা সবজি, ফল, মাছ, হাঁস-মুরগি সবই সংগ্রহ করছি প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে। এতে আমাদের ভোক্তারা তাজা, ফ্রেশ এবং উন্নতমানের পণ্য পাচ্ছেন, তেমনি কৃষকরাও পাচ্ছে পণ্যের ন্যায্যমূল্য।’

ইউক্যাশের একজন প্রতিনিধি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশের প্রান্তিক কৃষকদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা। এতে কৃষকেরা যেমন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি তাদের ব্যাংকিং হিস্ট্রিও তৈরি হবে। দেশের মূলধারার অর্থনীতিতে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি হবে।’

‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’ তাদের জীবনে কী রকম প্রভাব ফেলতে পারে? এমন প্রশ্নে কৃষকদের একজন বলেন, ‘আগে ফসল বেশি হলে ন্যায্যমূল্য পেতাম না। এখন এখানে সঠিক দর পাচ্ছি। আবার ফসলের টাকা ইউক্যাশেও জমা হচ্ছে। তাতে কিছু সঞ্চয়ও হবে।’

অন্য একজন জানান, ‘বছরে কয়েক মাস ভালো ফসল হয়, বাকি সময় ফসল না থাকলে সংসারে অভাব অনটনে পড়তে হয়, এখন প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং এর ফলে টাকা সঞ্চিত থাকলে অভাবের দিনে এখান থেকে টাকা তোলা যাবে, আবার চাষের পরিমাণ বড় করতে চাইলেও ভবিষ্যতে সুযোগ পাওয়া যাবে।’

স্বপ্ন এবং ইউসিবি’র যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’-এ কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত খেতের শাক-সবজি, পুকুরের মাছ, মাচার লাউ, খোঁপের হাঁস-মুরগি-ডিম থেকে শুরু করে গাছের আম-কাঁঠাল, ফুল-ফল যেকোনো কিছুই জমা দিলে স্বপ্ন সেগুলোর ন্যায্যমূল্য কৃষকের নিজের ইউক্যাশ অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবে। এই টাকা কৃষকেরা যেকোনো সময় তুলে ফেলতে পারবেন।

সংগৃহীত এই পণ্যগুলো স্বপ্ন সুপার শপ তাদের সবগুলো আউটলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিবে পুরো দেশে। এত করে এক এলাকার পণ্য ভোগ করতে পারবে দেশের যেকোনো এলাকার মানুষ।

এই প্রজেক্ট বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আগে যেখানে অনেক ফসল খেতেই নষ্ট হতো, সেখানে এখন কৃষকেরা ঝুড়ি ভর্তি করে অ্যাগ্রো ব্যাংকিং প্রজেক্টে সবজি নিয়ে আসতে পারবে এবং ন্যায্যমূল্য পাবে। ফলে কৃষক এবং ভোক্তাদের মাঝখান থেকে মধ্যস্থ কারবারির দৌরাত্ম্য কমবে। প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং কৃষকের মুখে যেমন হাসি ফোটাতে পারে, তেমনি সচল করতে পারে দেশের অর্থনীতির চাকাও।

এতে দরিদ্র কৃষকও এখন দেশের অর্থনীতিতে সক্রিয় অবদান রাখতে পারবে। এক সময়ের কৃষকের বাংলাদেশ নামে পরিচিত এ দেশ আবারও ‘প্রজেক্ট অ্যাগ্রো ব্যাংকিং’এর মাধ্যমে কৃষকের হাত ধরেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে।