পুঁজিবাজার ঠিকই আছে: অর্থমন্ত্রী

আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি
আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মনে করেন, দেশের পুঁজিবাজার ঠিকই আছে। তাঁর মতে, এ বাজার খারাপ অবস্থানে নেই, বরং সাংবাদিকেরা বাজার নিয়ে নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) গিয়ে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন বৈঠক শেষে গত রোববারই অর্থমন্ত্রী দেশে ফেরেন। এরপর গতকাল সোমবার সরকারি ছুটির দিনে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে তিনি বিএসইসি কার্যালয়ে যান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছেন ঠিকই, তবে বিশেষ কোনো অ্যাজেন্ডা নেই তাঁর। ছুটির দিনে কেন এই বৈঠকের আয়োজন হলো—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই তো পত্রিকায় লিখছেন, পুঁজিবাজার নেই, বাংলাদেশ নেই, কোথায় সে রকম ঘটনা ঘটেছে?’
এদিকে বাজারে টানা পতনের প্রতিবাদে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মতিঝিলে বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা। গত এক মাসের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় আড়াই শ পয়েন্ট। আর তিন মাসের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ৬২৬ পয়েন্ট। এ সময় লেনদেনও হাজার কোটি টাকা থেকে কমে নেমে এসেছে সাড়ে তিন শ কোটি টাকায়।

তিন মাস ধরে বাজারে পতন হচ্ছে এবং গত ২০ বছরে এত লম্বা সময় বাজার খারাপ ছিল না—এ তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় পতন হচ্ছে? সূচক ছিল ৪ হাজার ৫০০ পয়েন্ট, হয়ে গিয়েছিল ৫ হাজার ৯০০ পয়েন্ট। বাজারে কাউকে জোর করে নিয়ে আসা যাবে না। কেউ ইচ্ছে হলে আসবেন, নইলে আসবেন না। সূচক যে অবস্থায় আছে, আমরা খারাপ দেখি না।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বাজার চলে আপনাদের দ্বারা। কিন্তু যেভাবে চালাচ্ছেন—মনে হয় বাজারই নেই। সূচক ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৩০০ পয়েন্ট হলে কী এমন হয়ে যায় বলুন তো!’ এ সময় মন্ত্রী কিছু উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, জাপানে ১৯৮৯ সালে যে সূচক ছিল ৩৯ হাজার পয়েন্ট, ২০০৭ সালে তা নেমে আসে ৭ হাজার পয়েন্টে। যুক্তরাষ্ট্রেও ১৭ হাজার থেকে ৭ হাজার পয়েন্টে নেমে আসে সূচক।
দুনিয়ার সব জায়গাতেই এ রকম হয়—এমন মন্তব্য করে মুস্তফা কামাল আবার সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ভয় দেখাচ্ছেন। ভয় দেখালে তো হবে না। মুশকিল হচ্ছে আমাদের বাজারটা অন্যদের মতো নয়। অন্যদের বাজারে যাঁরা আসেন, বুঝে-শুনেই আসেন। আমাদের বাজারে জেনে-বুঝে আসা লোক কম।’

বৈঠক শেষে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে আস্থার সংকট থাকা উচিত না। বাজারের অংশগ্রহণকারী হয়ে কেউ যদি আস্থার সংকটের কথা বলে থাকেন, তাহলে তিনি অন্যায় কাজ করেছেন। কারও পারসেপশন (ধারণা) দিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করা উচিত না। এমন কিছু এখন ঘটেনি, যার জন্য আস্থার সংকট হবে।

বাজার নিয়ে যা-তা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে খায়রুল হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারতেও সূচকের পতন হয়। কিন্তু সেসব দেশে কেউ বিক্ষোভ করে না।
১৯৯৬ ও ২০১০ সালের বাজার ধসের পেছনের লোকদের খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভালো কেউ বাজারে আসবে না। এলে খারাপগুলোর সঙ্গে মিশে ভালোগুলোও খারাপ হয়ে যাবে।