ইরান থেকে তেল কিনলে কোনো ছাড় নয়: যুক্তরাষ্ট্র

ইরান থেকে যেসব দেশ তেল কিনবে, তাদের আর কোনো সাহায্য করবে না যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স
ইরান থেকে যেসব দেশ তেল কিনবে, তাদের আর কোনো সাহায্য করবে না যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ একটু ঝুলে পড়তেই আবার ইরানের দিকে মনোযোগ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইরান থেকে যারা এখনো তেল কিনছে, নিষেধাজ্ঞা থেকে তাদের অব্যাহতির বিষয়টি তুলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এপ্রিল মাসের পর চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ককে নিষেধাজ্ঞার গ্যাঁড়াকল থেকে অব্যাহতির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি আর বাড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইরানের তেল রপ্তানি বাণিজ্য জোর ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউস জানায়, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ককে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। তিন মিত্রদেশ—জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্কসহ চীন ও ভারতকে যে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তা অবসান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতালি, গ্রিস এবং তাইওয়ান এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নিয়ে ইরান থেকে তেল কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার করা এই চুক্তি বাতিল করবেন। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর এই চুক্তিতে পৌঁছায় সব পক্ষ।

ইরানের সঙ্গে এই পারমাণবিক চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)’। চুক্তি মোতাবেক ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়। তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে আনতে রাজি হয় দেশটি। এ ছাড়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত চুল্লির সংখ্যা কমিয়ে আনার শর্তও ছিল চুক্তিতে।এসব শর্ত মেনে চলার বদলে ইরানের ওপর আরোপ করা বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। বিশেষ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। পরমাণু চুক্তি হওয়ার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পায় ইরান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে বাজেয়াপ্ত থাকা কোটি কোটি ডলারের সম্পদের অধিকারও ফিরে পেয়েছিল দেশটি।

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিটি করেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। এর সঙ্গে জার্মানিও ছিল। অবশ্য চুক্তির আগে ও পরে ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে যে তাদের এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল।

তবে গত বছরের মে মাসে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অবরোধের ঘোষণাও এসেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে।

বিশ্বশক্তির সঙ্গে সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির সুবাদে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে যে যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল, গত নভেম্বরে তা আবার পুনর্বহাল করে যুক্তরাষ্ট্র। জাহাজ নির্মাণ, বাণিজ্য, অর্থায়ন, ব্যাংক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হয়। এই খাতগুলো ইরানের অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি। ওয়াশিংটনের এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেবল ইরানই ছিল না, যারা এই দেশের সঙ্গে ব্যবসা করবে কিংবা তেল কিনবে, তাদের ওপরও মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তবে ভারত, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইতালি, চীনকে ছয় মাস নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়। পরে তুরস্কও ইরানি তেল কেনার ক্ষেত্রে এ ছাড় চায়। তবে এখন আর সময় বাড়াচ্ছেন না ট্রাম্প।