লেক্সাস গাড়ির দাম উঠেছে ২ লাখ টাকা

বিলাসবহুল গাড়ির চতুর্থ দফা নিলামে ২২টি গাড়ি মধ্য একটি গাড়ির জন্য ভালো দাম পাওয়া গেছে। ফাইল ছবি
বিলাসবহুল গাড়ির চতুর্থ দফা নিলামে ২২টি গাড়ি মধ্য একটি গাড়ির জন্য ভালো দাম পাওয়া গেছে। ফাইল ছবি

পর্যটন সুবিধায় আনা বিলাসবহুল গাড়ির চতুর্থ দফা নিলামেও খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। এবার ২২টি গাড়ি নিলামে তুলে শুধু একটি গাড়ির জন্য ভালো দর পাওয়া গেছে। ফলে এবারও এক-দুটির বেশি গাড়ি বিক্রির সুযোগ নেই।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকেরা কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় ছয় থেকে আট বছর আগে এসব বিলাসবহুল গাড়ি এনেছিলেন। কিন্তু ওই সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে কাস্টমস বিভাগ কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানিকারকেরা গাড়িগুলো বন্দর থেকে আর খালাস করেননি। পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব গাড়ি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। তবে কয়েকবার নিলামে তোলার পরও ভালো দাম না পাওয়ায় গাড়িগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না। এসব গাড়ির বয়স এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১২ থেকে ২৪ বছর। আর এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারের মধ্যে পড়ে আছে ছয় থেকে আট বছর ধরে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ এসব গাড়ি বিক্রির জন্য গত ১৬ এপ্রিল চতুর্থ দফায় নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রথম ধাপে ২২টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। যার মধ্যে ছিল বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, লেক্সাস, জাগুয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, মিতসুবিশিসহ আটটি ব্র্যান্ডের গাড়ি। ২২টি গাড়ির মধ্যে ১৮টি গাড়ি কেনার আগ্রহ দেখান নিলামে অংশগ্রহণকারীরা। গত ১৮ এপ্রিল এই গাড়িগুলোর সর্বোচ্চ দরের তালিকা প্রকাশ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

তালিকা অনুযায়ী, মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর আগে তিনটি নিলামে এত বেশি দর পড়েনি কালো রঙের এই গাড়ির। ২০০৪ সালে জার্মানিতে তৈরি এই গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষমতা ৩৭২৪ সিসি। গাড়িটির আবার চাবি নেই। নিলামে সবচেয়ে কম দাম পাওয়া গেছে লেক্সাস ব্র্যান্ডের ১৮ বছরের পুরোনো একটি গাড়ির। মাত্র ২ লাখ ৮ হাজার টাকা দর পাওয়া গেছে গাড়িটির। জাপানে তৈরি এই গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষমতা ২৯৯৭ সিসি।

আগের তিন দফায় নিলাম ডাকা হলে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় তা বাতিল করা হয়। ফলে এবার নতুন করে গাড়িগুলোকে নিলামে ওঠানোয় তা প্রথম নিলাম হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশের বেশি দাম না পড়লে গাড়ি বিক্রি করতে পারে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সেই হিসাবে এবারও নিলামে তোলা গাড়ি বিক্রির সম্ভাবনা কম। নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় নিলামে প্রথমবারের চেয়ে বেশি দর পড়লে বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ থাকে। আর তৃতীয় দফা নিলামে যেকোনো দরই অনুমোদন দিতে পারে কাস্টমস। কিন্তু এবারের নিলামকে প্রথম নিলাম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় যেকোনো দরে বিক্রির সুযোগ থাকছে না।

কাস্টমস কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগে নিলামে তোলা হলেও গাড়ির ইনভেন্ট্রিতে (গাড়ি প্রকৃত অবস্থার বিবরণ) অসংগতি ছিল। এ কারণে নতুন করে ইনভেন্ট্রি করে গাড়িগুলো নিলামে তোলা হয়েছে। প্রথম নিলামে খুব বেশি গাড়ি বিক্রির সুযোগ না থাকলেও দ্বিতীয় নিলামে ভালো দর পাওয়া গেলে বিক্রি করা হবে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর একবার করে এসব গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে। প্রথম দফায় ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি, দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালে ১১৩টি এবং তৃতীয়বার ২০১৮ সালে ১১১টি গাড়ি নিলামে তোলে কাস্টমস। গত তিন বছরে তিনবার নিলামে একটি গাড়িও বিক্রি করতে পারেনি কাস্টমস। অথচ এই তিন দফায় অনেকগুলো গাড়ির ভালো দর দিয়েছিলেন দরদাতারা।

নিয়মিত নিলামে অংশগ্রহণকারী শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের কর্ণধার সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটন সুবিধায় আনা গাড়িগুলো এবারই ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিলামে তোলা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রথম নিলামে বিক্রির সুযোগ কম। তবে দ্বিতীয়বার থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাইলে বিক্রির অনুমোদন দিতে পারবে। পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতিপত্র নেওয়ার বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলে নিলামে সাড়া পড়বে বেশি।