গুদামে 'জায়গা নেই' তাই...

বড়াইগ্রাম উপজেলা খাদ্যগুদামে ‘জায়গা নেই’ দাবি করে কৃষকের ধান কিনছে না সরকার। ধান কেনা-বেচা হচ্ছে না, তাই গুদামের বাইরে ট্রাক দেখে অনেকেই কৌতূহলী হচ্ছেন। বড়াইগ্রাম, নাটোর, ২১ মে। ছবি: মুক্তার হোসেন
বড়াইগ্রাম উপজেলা খাদ্যগুদামে ‘জায়গা নেই’ দাবি করে কৃষকের ধান কিনছে না সরকার। ধান কেনা-বেচা হচ্ছে না, তাই গুদামের বাইরে ট্রাক দেখে অনেকেই কৌতূহলী হচ্ছেন। বড়াইগ্রাম, নাটোর, ২১ মে। ছবি: মুক্তার হোসেন

‘জায়গা নেই’ অজুহাত দেখিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ও গম কেনা হচ্ছে না। এ কারণে সাধারণ কৃষক সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যে ধান ও গম বিক্রি করতে পারছেন না।

বনপাড়া সরকারি খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সাংসদ আবদুল কুদ্দুস ১২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি গুদামের জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে ধান কেনা উদ্বোধন করেন। এ সময় গুদাম কর্তৃপক্ষ ৩৬ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন চাল, ২৮ টাকা কেজি দরে ৫৫৫ মেট্রিক টন গম ও ২৬ টাকা কেজি দরে ২০৫ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার ঘোষণা দেয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত গুদাম কর্তৃপক্ষ কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান ও গম কিনছে না। শুধু চালকল মালিকদের কাছ থেকে প্রতি দিন ছয় থেকে সাত ট্রাক করে চাল কিনছেন। এতে চাল ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সাধারণ কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে না পেরে হতাশ।

গতকাল সকালে স্থানীয় সাংবাদিকেরা বনপাড়া খাদ্যগুদামে গিয়ে দেখেন, গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন ট্রাকে করে আসা ব্যবসায়ীদের চাল কেনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এ সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন কৃষকদের ধান কিনছেন না। গুদাম কর্মকর্তা জানান, গুদামে জায়গা নেই। তাই ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

এ সময় সেখানে ধান বিক্রি করতে আসা উপজেলার নগর দ্বারিখৈড় গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, বাজারে ধানের দর মণপ্রতি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা এই দরে ধান কিনে চাল করে চড়া দামে গুদামে বিক্রি করছেন। তাহলে সাধারণ কৃষকেরা কী করবেন?

ওই কৃষক বলেন, ‘জায়গা নেই’ অজুহাতে গুদাম কর্তৃপক্ষ ধান কিনছে না। অথচ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল কেনার জায়গার অভাব হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, গুদাম কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করলেও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করছে না। এসব দেখার কেউ নেই।

এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, সামনে ঈদ। কৃষকেরা লোকসান দিয়ে হলেও ধান বিক্রি করে খরচ মেটাচ্ছেন। তাই স্বার্থের কথা না ভেবে কৃষকদের কাছ থেকে এখন সরাসরি ধান কেনা দরকার। এ ব্যাপারে গুদাম কর্মকর্তাদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যদি তা বিবেচনা না করেন, তাহলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার পারভেজ জানান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে ইতিমধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও গম কেনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত কৃষক ছাড়া ধান বা গম কেনা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।