তিন মাসের মধ্যে আরএসসি

রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ তদারকিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে আরএমজি সাসটেইনিবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি) গঠন করতে যাচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এটি হবে একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ, যাতে পোশাকশিল্পের মালিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন এবং বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

কাউন্সিলের অধীনে ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও বিলুপ্ত উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানাগুলোর তদারকি কাজ হবে। বাদবাকি কারখানাও আসবে কাউন্সিলের অধীনে। পোশাক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি তদারকির পাশাপাশি শ্রম অধিকার ও কারখানার পরিবেশ দেখভাল করবে আরএসসি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যাকর্ডের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন দূরে থাক, নিজেদের কারখানার সংস্কারকাজেরই অগ্রগতি ঠিকঠাক করতে পারছে না সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি)। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তত্ত্বাবধানে আরসিসি গঠন করা হয়েছিল। এদিকে গত ডিসেম্বরে অ্যালায়েন্স তাদের কার্যক্রম গোটালেও সেই জোটের সদস্য ২১ ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান নিরাপন নামে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে। গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপন যাত্রা শুরু করেছে। সব মিলিয়ে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চক্র থেকে বের হতেই আরএসসি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিজিএমইএ।

জানা গেছে, আরএসসি গঠনের বিষয়টি মেনে নিয়েছে অ্যাকর্ড। এ জন্য বিজিএমইএর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের এই জোটটি। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতে নতুন করে পাওয়া ২৮১ দিন সময় শেষ হওয়ার আগেই অ্যাকর্ড তার সব দায়িত্ব আরএসসিকে বুঝিয়ে দেবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরসিসির অক্ষমতার জন্য অ্যাকর্ড তাদের কার্যক্রম শেষ করবে না, এটা হতে পারে না। তা ছাড়া, আরসিসির কার্যক্রমও একদিন শেষ হবে। তাই আমরা নিজস্ব তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও এমনটি চায়।’ তিনি আরও বলেন, আরএসসিতে পোশাকশিল্প মালিক, শ্রম সংগঠন ও ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি—এই তিন পক্ষের সম্মতিতে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো বিষয়ে মীমাংসা না হলে তা সরকারের কাছে পাঠানো হবে।

অ্যাকর্ডের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তাদের ঢাকা কার্যালয়ে বিজিএমইএ একটি ইউনিট স্থাপন করবে। আগামী মাসেই ইউনিটটির যাত্রা শুরু হবে। বিজিএমইএর ইউনিটের সম্মতি ছাড়া অ্যাকর্ড কোনো কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে না। ভবিষ্যতে এই ইউনিটই আরএসসি হিসেবে কাজ করবে বলে জানান রুবানা হক।

>

বিজিএমইএর উদ্যোগে এই কাউন্সিলে পোশাকশিল্প মালিক ছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন, বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিনিধিরা থাকবেন।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘২৮১ দিন শেষে অ্যাকর্ডের লোকবল, কার্যালয় ও আসবাব আরএসসির অধীনে চলে আসবে। নিরাপনকেও কাউন্সিলের অধীনে আনা হবে। সে জন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। তা ছাড়া, বিজিএমইএর ও বিকেএমইএর বাইরে থাকা কারখানাগুলোকেও কাউন্সিলের অধীনে দৃশ্যমান করা হবে। কারণ, কোনো একটি কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে সেটি পুরো পোশাকশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ তিনি বলেন, আরএসসির অর্থায়নের কত টাকা লাগবে, সেটি এখনো হিসাব করা হয়নি। তবে অর্থায়নের জন্য ব্র্যান্ড ও দাতা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। তারা দুই হাজারের বেশি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করে। গত বছরের মে মাসে তাদের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই অ্যাকর্ড ঘোষণা দেয়, ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে তারা। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে শর্ত সাপেক্ষে তারা ২৮১ দিন সময় পেয়েছে। অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে অ্যালায়েন্স কার্যক্রম গুটিয়েছে।

আরএসসির বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাই চাচ্ছিলাম অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রমের পর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হোক। সেটি বেসরকারি উদ্যোগে হওয়ায় আশার জায়গা তৈরি হয়েছে। অবশ্য এই ধরনের বেসরকারি উদ্যোগ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে হলে ভালো। এ ক্ষেত্রে সরকার ও আরএসসি যৌথভাবে তাদের কার্যক্রম পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় আলাপ-আলোচনা করে নিতে পারে।’