বড় বাজারে রপ্তানি বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর এ বাজারটিতে পোশাক রপ্তানিতে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) সেটি বেড়ে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ চার মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪২৩ কোটি ডলারের পোশাক।

চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ২৯ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে পোশাকের ব্যবসা বৃদ্ধির সুফল বড় পরিসরে পাচ্ছে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারত। দেশ তিনটির পোশাক রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৮৮, ১৩ দশমিক ৯১ ও ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে দেশটিতে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক চীনের রপ্তানি বেড়েছে মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ধস নামে। সে বছরের ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বছর ঘুরতেই কমে নেমে আসে ২ দশমিক ২৯ শতাংশে। ২০১৫ সালে পৌনে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। পরের দুই বছর আবার রপ্তানি কমে যায়। গত বছরের শুরুর দিকে রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরে। বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। অতিরিক্ত শুল্কের হাত থেকে রেহাই পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অনেকেই তাদের ক্রয়াদেশ চীন থেকে সরিয়ে বাংলাদেশসহ অন্য দেশে নিয়ে আসতে শুরু করে। চলতি বছর সেটি আরও বাড়তে থাকে।

এই বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বেশ কিছুদিন ধরে বলছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা। ঈদের আগে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী অর্থবছরের বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সব বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দাবি করে তাঁরা বলেছেন, পাঁচ বছরের জন্য সুবিধাটি দিলে পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। তবে আমরা কেবল কম দামের পোশাকের ক্রয়াদেশই পাচ্ছি। কিন্তু বেশি দামের পোশাকের ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। নগদ সহায়তা দিলে সেসব ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তাতে রপ্তানি আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে।

>যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর পোশাক রপ্তানিতে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক আমদানির হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৭২ কোটি বর্গমিটারের সমপরিমাণ কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে অর্থের হিসাবে প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের বাজার হিস্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। চলতি বছর চার মাস শেষে সেটি বেড়ে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি করে চীন। গত বছর দেশটি ২ হাজার ৭৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। তখন প্রবৃদ্ধি হয় ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে চীন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম গত বছর ১ হাজার ২২১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৪২৩ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে তাদের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

ভিয়েতনামের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১৫৭ কোটি ডলার। বাজারটিতে ভারত ও মেক্সিকো যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রপ্তানি করে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভারত ১৫৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মেক্সিকো রপ্তানি করেছে ১০৪ কোটি ডলারে পোশাক। তবে তাদের রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।