অর্থমন্ত্রী কত নম্বর পেলেন?

জাতীয় সংসদে গতকাল ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই বাজেট নিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার কাছে তাৎক্ষণিকভাবে বাজেটের কয়েকটি দিক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এখানে মতামতগুলো তুলে ধরা হলো। যে বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়েছিল:
১. বাজেটের সবচেয়ে ভালো দিকগুলো কী?
২. বাজেটের দুর্বল দিকগুলো কী?
৩. বাজেট কি যথেষ্ট কর্মসংস্থান করতে পারবে?
৪. ১০-এর মধ্যে আপনি কত দেবেন?

তৌফিক আহমদ চৌধুরী
তৌফিক আহমদ চৌধুরী

তৌফিক আহমদ চৌধুরী
সাধারণ সম্পাদক, অর্থনীতি সমিতি
৬.৫/১০
প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়ানো হয়েছে, জোর দেওয়া হয়েছে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের দিকে৷ আর কমবে আমদানি শুল্ক৷ এটা ভালো পদক্ষেপ৷ তবে যেভাবে করের ভিত্তি সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তা কতটা কার্যকর করা যাবে, সে প্রশ্ন থাকছে৷ কর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি এখানে খুব জরুরি৷ আবার বাড়িভাড়ার ওপর কর আদায়ে যে পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হচ্ছে, তা বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে৷ বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সমস্যা বাড়তে পারে৷ কাজেই এটা ভালোভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন৷ বাজেটের অর্থায়ন ও কাঠামো গতানুগতিকই আছে৷ এখানে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি৷ ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হয়েছে৷ ছোট ছোট অর্থমন্ত্রী অনেকগুলো খাতে থোক বরাদ্দ দিয়েছেন৷ এটা বাজেটের একটি বড় দুর্বলতা৷ কেননা, এখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এই দুর্নীতি কীভাবে রোধ করবেন তিনি? সরাসরি বলা যাবে না যে কতটা কর্মসংস্থান তৈরি করবে৷ তবে স্থিতিশীলতা যদি বজায় থাকে, তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে তা কাজের সুযোগ তৈরি করবে৷

ফজলুল হক
ফজলুল হক

ফজলুল হক
সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
৬.৫/১০
এবারের বাজেটের আকার বড়, উচ্চাভিলাষী। তবে এটাই বাজেটের ভালো দিক। কেননা, চলতি অর্থবছরে আমরা খারাপ সময় পার করেছি। এরপর আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার সাহসকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। অনগ্রসর এলাকায় শিল্প স্থাপন ও স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা এবং পোশাক কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে স্টিলের ভবন (প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং) ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। তবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে তার রোডম্যাপ পরিষ্কার নয়। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ তুলনামূলক কম। সেতু খাতের তুলনায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ খাতে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করকাঠামো আরও বিস্তৃত রাখা দরকার ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের রোডম্যাপ পরিষ্কার নয়। তাই কর্মসংস্থান নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

আসিফ ইব্রাহিম
আসিফ ইব্রাহিম

আসিফ ইব্রাহিম
সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার
৭/১০
প্রস্তাবিত বাজেটে অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। আর উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর সুপার ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। দুটো বিষয়ই ইতিবাচক। তবে জিডিপির ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি রাখা এবং প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ একটু উচ্চাভিলাষী বলে মনে হচ্ছে। কারণ এটা অর্জন করার জন্য শিল্পকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে হবে। দেশে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। আবার এনবিআরকে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব আদায় করতে হবে। নইলে রাজস্ব আদায় না হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হবে না। বাজেটে মুঠোফোনের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। দেশে দ্রুতগতিতে টেলিযোগাযোগ যে বাড়ছিল তাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাজেটে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা সমস্যায় আছেন তহবিল ব্যয় নিয়ে। ব্যাংক ঋণের সুদহার এখনো অনেক বেশি।

মাহবুবুল আরম
মাহবুবুল আরম

মাহবুবুল আরম
সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার
৭/১০
কৃষি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস এবং রপ্তানি খাত উৎসাহিত করতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাজেটের ইতিবাচক দিক। দেশীয় শিল্প প্রসারে প্রস্তাবিত বাজেট সহায়ক হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্যের স্থানীয় ঋণপত্রের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর প্রত্যাহার করায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা বাড়বে। ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে যে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, তা বেসরকারি খাতের জন্য শুভ হবে না। কারণ, এতে সুদের হার বাড়তে পারে। বেসরকারি খাতে ঋণ পেতেও কঠিন হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে গণপরিবহনের কাজে ব্যবহৃত টায়ার আমদানিতে শুল্ক-কর বাড়ানো উচিত হয়নি। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কমানোর মতো অন্যান্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও কমানো উচিত। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ যেসব বড় প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।