বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম কমেছে, দেশে নয়

বিশ্ববাজারে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বেশ খানিকটা কমেছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি সৌদি আরামকো জুলাই মাসে প্রপেনের দাম নির্ধারণ করেছে টনপ্রতি ৩৭৫ ডলার, যা আগের চেয়ে ৫৫ ডলার কম। অন্যদিকে বিউটেনের দাম ৬০ ডলার কমে ৩৫৫ ডলারে নেমেছে।

দেশের কোম্পানিগুলো ৩০ শতাংশ প্রপেন ও ৭০ শতাংশ বিউটেনের মিশ্রণে এলপিজি বাজারজাত করে। বিশ্ববাজারে প্রপেন ও বিউটেনের দাম কমলেও দেশে এলপিজির দাম কমেনি। খুচরা পর্যায়ে এখন প্রতি ১২ কেজির এক সিলিন্ডার এলপিজি বিক্রি হচ্ছে এলাকাভেদে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকায়।

সরবরাহকারী দুটি কোম্পানি বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এলপিজির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে কমানো যায়নি। করের কারণে দেশে যেটুকু মূল্যবৃদ্ধির কথা, তা সমন্বয় করা হয়েছে বিশ্ববাজারের কমে যাওয়া দরের সঙ্গে।

এ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মো. জাকারিয়া জালাল বলেন, ‘বাজেটে করের কারণে প্রতি ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এ সময়ে বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কমেছে। আমরা এ কারণে খুচরা বাজারে মূল্য বাড়াইনি।’

কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে এখন বছরে প্রায় আট লাখ টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে। সরকার বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ আর দেবে না। ফলে শহরে নতুন যত ভবন হচ্ছে, সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে এলপিজি। অন্যদিকে জেলা, উপজেলা শহর, এমনকি গ্রামেও এলপিজি ব্যবহার করছে। ব্যবহার বাড়ছে শিল্প ও পরিবহন খাতেও। পাঁচজনের একটি পরিবারে তিনবেলা রান্নায় মাসে সাধারণত ১৮ কেজির মতো গ্যাস লাগে। এতে ব্যয় দাঁড়ায় দেড় হাজার টাকার মতো। এদিকে ১ জুলাই থেকে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস–সংযোগের ক্ষেত্রে দুই চুলার বিল ১৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করেছে।

>

কোম্পানিগুলো বলছে, বিশ্ববাজারে কমলেও বাজেটে এলপিজির ওপর কর বেড়েছে। এ কারণে দাম কমেনি। বিশ্ববাজারে বাড়লে করের প্রভাব পড়বে।

দেশে এখন প্রায় ১৮টি কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেন, তাতে এলপিজির ওপর বাড়তি ৫০ টাকার করভার বেড়েছে বলে দাবি কোম্পানিগুলোর। তারা জানিয়েছে, আগে এলপিজিতে মূল্য সংযোজন করের (মূসক/ভ্যাট) ভার ছিল মোট ৯ টাকা। আগে এলপিজির ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ৬০ টাকা ধরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতো। এখন প্রকৃত মূল্য অর্থাৎ ৯০০ টাকার ওপর ভ্যাট হবে ৫ শতাংশ। এ ছাড়া সরবরাহ ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়েও লেনদেনে কর বসেছে।

সৌদি আরামকোর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত এক বছরে প্রপেন ও বিউটেনের সর্বোচ্চ দাম ছিল গত বছর অক্টোবর মাসে—প্রতি টন ৬৫৫ ডলার। এরপর গত জানুয়ারিতে প্রপেনের দাম কমে টনপ্রতি ৪৩০ ও বিউটেন ৪২০ ডলারে নামে। মে মাসে এ দর আবার বেড়ে যথাক্রমে ৫২৫ ও ৫৩০ ডলারে ওঠে। পরের দুই মাস আবার কমল।

কোম্পানিগুলোর দাবি অনুযায়ী, গ্যাস বিক্রি থেকে তাদের যে আয় হয়, তা থেকে আবার সিলিন্ডার বিক্রিতে ভর্তুকি দেয় তারা। ১২ কেজির একটি ভালো মানের সিলিন্ডারের উৎপাদন খরচ ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। সেটি বিক্রি করতে হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে।

যমুনা স্পেসটেক জয়েন্ট ভেঞ্চার লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমেছে বলে করের চাপ বোঝা যায়নি। কিন্তু দাম বেড়ে গেলে সেটা বাজারে প্রভাব ফেলবে।