ভোজ্যতেলের দামও বাড়তি

বাজেটে কর আরোপের কারণে বাজারে বাড়ছে বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম। নতুন অর্থবছর শুরুর পর গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিডেট তাদের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা বাড়িয়েছে। বাকিরা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেন, তাতে ভোজ্যতেলের মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ছাড় তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে।

বাজেট কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ এডিবল, সিটি, মেঘনা, টি কে ও এস আলম গ্রুপের মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দেয়। কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, তাদের প্রস্তাবে কর আরোপ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে লিটারে প্রায় ৮ টাকার মতো মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। অবশ্য এতটা বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। এখন ট্যারিফ কমিশন সেটা পর্যালোচনা করবে। এটা নিয়ে বৈঠক হবে। এরপর বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন দাম ঘোষণা করা হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে ২ লাখ টন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি হয়। পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে পরিশোধন করে খোলা ও বোতলজাত অবস্থায় বাজারজাত করে। বাংলাদেশে এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা, সিটির তীর ও মেঘনার ফ্রেশ বাজারের উল্লেখযোগ্য ভোজ্যতেলের ব্র্যান্ড।   

তেলের বাড়তি দাম সংসারের ব্যয়ে নতুন করে চাপ তৈরি করবে। এবারের বাজেটে চিনির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতে চিনির দাম ইতিমধ্যে
তিন টাকার মতো বেড়েছে। এ ছাড়া এখন পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম, গরুর মাংস, সবজি ও মাছের দাম বেশ চড়া।  

>

বাড়তি দামের অনুমোদন চেয়ে চিঠি
লিটারে প্রায় ৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব
৩ টাকা বাড়িয়েছে একটি কোম্পানি
দেশে দাম বাড়ছে বাজেটে কর বাড়ানোর কারণে
এবারের বাজেটে ভোজ্যতেলে ভ্যাট ছাড় তুলে নেওয়া হয়
অগ্রিম আয়করও ধার্য করা হয়েছে

আইন অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে মূল্য বাড়াতে হলে ট্যারিফ কমিশনকে আগে জানাতে হয়। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি জানিয়ে উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ৯ জুলাই চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, বাজেটে ভোজ্যতেলের আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রদান করতে হবে। এ কারণে সদস্যরা মূল্যবৃদ্ধি করেছেন।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপচাঁদার সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের একটি বোতলের নতুন সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ধরা হয়েছে ৫৩০ টাকা, যা আগের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি। তীরের পাঁচ লিটারের বোতলের এমআরপি এখনো ৫০০ টাকা। অন্যদিকে এক লিটারের দর ১০২ টাকা।

কোম্পানিগুলো নতুন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে এক লিটারের বোতলের কারখানা পর্যায়ে মূল্য ধরা হয়েছে ১০১ থেকে ১০৩ টাকা। অবশ্য একটি কোম্পানি ৯৮ টাকা ও একটি কোম্পানি ১১২ টাকা মূল্য নির্ধারণের কথা বলছে। একটি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় একটু বাড়িয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সরকার সেটা পর্যালোচনা করে যৌক্তিক দাম ঠিক করে।

এদিকে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল আছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭৮৯ ডলার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ সময়ে গড় দাম ছিল ৭৫৭ ডলার। পরের তিন মাসে গড় দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৭৪০ ডলার। দেশেও গত এক বছর দাম কমতির দিকে ছিল।