গবাদিপশুর চাহিদা ৫ লাখ, ৮০ ভাগই আসবে স্থানীয় উৎস থেকে

কোরবানির পশু
কোরবানির পশু

বরিশাল বিভাগে এবার কোরবানি উপলক্ষে প্রায় ৫ লাখ গরু, মহিষ ও ছাগলের চাহিদা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের ধারণা, শতকরা ৮০ ভাগ গবাদিপশুর চাহিদা বরিশাল অঞ্চলের খামারি ও গৃহস্থেরা জোগান দিতে পারবেন। বাকি ২০ ভাগ বিভাগের বাইরে থেকে আমদানি করতে হতে পারে।

তবে গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন উৎস থেকে মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ গবাদিপশুর জোগান দেওয়া সম্ভব হতে পারে। বাকি ৫০ শতাংশ বিভাগের বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় এবার বরিশালের বাজারে গরুর মূল্য বরাবরের চেয়ে বাড়তি হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বরাবরের মতো এবারও কোরবানি উপলক্ষে বরিশাল নগর ও জেলায় পশুর হাট বসবে অন্তত ৫০টি। গত বছর বরিশাল নগরে দুটিসহ জেলার ১০ উপজেলায় ১৬টি স্থায়ী ও ৩০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছিল।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের হাটবাজার শাখা সূত্র জানায়, নগরের বাঘিয়ায় ও পোর্ট রোডে দুটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এর বাইরে গত বছর নগরের রূপাতলী মোল্লাবাড়ির মাদ্রাসা মাঠ, কালিজিরা বাজার ও সিঅ্যান্ডবি রোডে সেচ ভবনের পাশে তিনটি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ বছর এখনো কোনো অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বরিশালের ছয় জেলায় ২০১৮ সালে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৫টি গবাদিপশু কোরবানি হয়। এর মধ্যে বকনা গরুর সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৮২৭, ষাঁড় বা বলদের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার ২৪২, মহিষ ৭৮৩টি, ছাগল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৩টি ও ভেড়া ২ হাজার ৩৩৬টি।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, আগের বছরের চেয়ে এবার কোরবানি দেওয়া মোট গবাদিপশুর চেয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ চাহিদা বাড়তে পারে। সে হিসাবে বরিশাল বিভাগে এবার কোরবানিতে প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার কিংবা ৫ লাখ গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সূত্র জানায়, প্রাথমিক হিসাবে বিভাগের ১৫ হাজার ১৪৪ জন খামারির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে কোরবানির উপযোগী গবাদিপশুর সংখ্যা ৯০ হাজার। তবে হিসাবটি এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়। কারণ, এতে সব খামারি ও গৃহস্থালির গরুর সংখ্যা এখনো নির্ণয় হয়নি। গত বছর শুধু স্থানীয় খামারিরা দেড় লাখের ওপরে কোরবানির উপযোগী গরুর জোগান দিয়েছিলেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, গত বছর খামারি ও গৃহস্থালির পশুর মাধ্যমে ৮০ শতাংশ কোরবানির পশুর জোগান দেওয়া হয়েছিল। বাকি ২০ শতাংশ যশোর, ঝিনাইদহ, বগুড়া, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট থেকে আমদানি হয়েছিল। বিগত দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার গত বছরের চেয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ পশুর চাহিদা বাড়তে পারে। সে হিসাবে বরিশাল অঞ্চলের খামারি ও গৃহস্থালির গবাদিপশুর বাইরে এবারও পার্শ্ববর্তী বিভাগ ও জেলাগুলো থেকে ২০ শতাংশ গবাদিপশু সংগ্রহ করার প্রয়োজন হতে পারে।

নুরুল আলম বলেন, ভারত থেকে গরু পাঠানো বন্ধ এবং মাংসের দাম বাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নতুন খামারির সংখ্যা বাড়ছে। তবে কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা মেটানোর পর্যায়ে যেতে আরও সময় লাগবে।

বরিশাল সদরের চাঁদপুরা গ্রামের খামারমালিক জাহিদুর রহমান বলেন, বরিশাল অঞ্চলের ক্রেতারা সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনতে অভ্যস্ত নয়। ব্যাপারীরা খামার থেকে গরু কিনে হাটে তোলেন এবং সেখান থেকে গরু কেনেন। এ জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে বড় অঙ্কের অর্থ চলে যায়। তাতে গরুর মূল্যও বেশি পড়ে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, ‘আমাদের ধারণা, ২০ শতাংশের কিছু বেশি গরু বাইরের জেলা থেকে সরবরাহ করার প্রয়োজন হতে পারে। বাকি ৬০ শতাংশ পশু স্থানীয় খামারি এবং ২০ শতাংশ গৃহস্থালি পর্যায় থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।’

কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, বরিশালে উত্তরবঙ্গের মতো বৃহৎ আকারে গরু পালন না হলেও এখানে খামারির সংখ্যা কম নয়। বরিশাল অঞ্চলের খামারিরা প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। এবার যদি ভারতীয় গরু না আসে এবং বাজার স্থানীয় গরুর দখলে থাকে, তবে এই এলাকার খামারি ও গৃহস্থেরা লাভবান হবেন।