এবার প্রবৃদ্ধি কমবে: বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ভারতের সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্রেক্সিটের কারণে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, আগামী দুই অর্থবছরে (২০২০-২১ ও ২০২০-২১) প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। বিদায়ী অর্থবছরের হিসাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে বলে প্রাক্কলন করেছে বিশ্বব্যাংক। যদিও সরকারের সাময়িক হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

বিদায়ী অর্থবছরের বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি ভোক্তা চাহিদার কারণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলো অগ্রগতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরাজমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল্যায়নে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরেও বড় অবকাঠামো প্রকল্পে সরকারি খরচ বাড়বে। অবকাঠামো খাতে কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলে রপ্তানি শ্লথগতি হতে পারে। এ ছাড়া ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানির জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে এসব দেশের রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতি ও এশিয়া

বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, দক্ষিণ এশিয়া পুরোপুরি তেল আমদানিনির্ভর। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের প্রভাব অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে ভারতে। সবচেয়ে কম ২ দশমিক ৪ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে আফগানিস্তানে। এ ছাড়া পাকিস্তানে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা সাড়ে ৩ শতাংশ, মালদ্বীপে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, নেপালে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ভুটানে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

>

জিডিপির পূর্বাভাস
বিশ্বব্যাংক বলেছে, ব্রেক্সিটের কারণে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে

বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কয়েকটি ঝুঁকি আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আঞ্চলিক অস্থিরতা এবং দুর্বল আর্থিক খাত।

চলতি বছরে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে অস্থিরতা থাকার কারণে প্রবৃদ্ধিকে কাবু করে ফেলবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক

এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির সংখ্যা নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে, তেমনি এই প্রবৃদ্ধির সুবিধা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পাচ্ছে কি না, তা নিয়েও তর্কবিতর্ক আছে। প্রায় অভিযোগ ওঠে, বাংলাদেশ, ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো প্রবৃদ্ধির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখায়। কিন্তু বাস্তবে ততটা প্রবৃদ্ধি হয় না। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) উন্নয়ন-সহযোগীরা প্রতিবছর প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়, তার তুলনায় ওই সব দেশের সরকারের দেওয়া চূড়ান্ত হিসাবে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি হয়। আবার প্রবৃদ্ধির সংখ্যা দিয়ে এখন আর উন্নয়নকে মাপাও হয় না। বরং দেশের সব শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল কতটা পৌঁছাল এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার কত অগ্রগতি হলো, সেটাকেই উন্নয়ন হিসেবে দেখা হয়।