মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারের জন্য ভালো-খারাপ কিছুই নেই

শাকিল রিজভী
শাকিল রিজভী
>

গত বুধবার চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছিল নানা আলোচনা। শেয়ারবাজারে মুদ্রানীতির প্রভাব এবং সেটি ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার যৌক্তিকতা কতটুকু—এসব নিয়ে কথা বলেছেন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন

প্রথম আলো: নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত মুদ্রানীতি শেয়ারবাজারে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন?

শাকিল রিজভী: ঘোষিত মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক বা ভালো কিছু যেমন নেই, তেমনি নেতিবাচক বা খারাপ কিছুও নেই। আগে যেমন ছিল, তেমনি। তাই আমি মনে করি না, মুদ্রানীতির কারণে শেয়ারবাজারে কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি, মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা করে কিছু থাকে না। আসলে শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা করে কিছু থাকার সুযোগও কম।

প্রথম আলো: তাহলে মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় কেন?

শাকিল রিজভী: কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি, মুদ্রানীতি নিয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা হতে আমরা খুব একটা দেখিনি। ২০০৮-৯ সালে যখন শেয়ারবাজার চাঙা হয়ে ওঠে, তখন থেকে দেখছি মুদ্রানীতি থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাতের নানা বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। এরপর থেকে দেখা যাচ্ছে, মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় বাজারে নানা ধরনের অস্থিরতার ঘটনা ঘটছে। সাধারণত আমরা দেখি, মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ অর্থ সরবরাহব্যবস্থার জন্য নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়। কখনো ঋণ আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) কমানো-বাড়ানো, রেপো-রিভার্স রেপো, নগদ জমার হার (সিআরআর), সংবিধিবদ্ধ জমার হারের (এসএলআর) বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। এ কারণেই হয়তো বিনিয়োগকারীরা এখন মুদ্রানীতি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন থাকেন এবং এটি ঘিরে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।

প্রথম আলো: নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। তাতে শেয়ারবাজার ও অন্যান্য ব্যবসায় কি কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?

শাকিল রিজভী: আমি মনে করি, দুই শ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য যান। যখন ব্যবসার সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। আরেকটি অংশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেন খারাপ উদ্দেশ্যে—যাঁদের ঋণ নিয়ে ঋণ ফেরতে দেওয়ার মানসিকতা থাকে না। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব সময় ব্যাংকে ঋণের আবেদন করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ব্যাংকঋণের আগ্রহে কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা নেই বলেই এসব ব্যবসায়ী ঋণের জন্য ব্যাংকে যাচ্ছেন না। এ কারণে আমরা দেখছি, বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদাও আগের চেয়ে কমে গেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক কম হয়েছে গত ছয় মাসে। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। এর বড় ধরনের কোনো প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য বা শেয়ারবাজারে পড়বে বলে আমার মনে হয় না। তবে এর মধ্যে যদি বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বেড়ে যায়, তাতে হয়তো পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

প্রথম আলো: বেসরকারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো না হলে তার নেতিবাচক প্রভাব কি শেয়ারবাজারে পড়বে না? আপনি কী মনে করেন?

শাকিল রিজভী: ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না হলে কোনো না কোনোভাবে এর প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়বে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর আয় কমেছে। তার মানে এ খাতে ব্যবসা খারাপ। এ খাতের বহুজাতিক একটি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ঋণাত্মক হয়ে গেছে। অথচ কোম্পানিটি অনেক দিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা দিয়ে আসছিল। এখন ব্যবসা খারাপ হওয়ায় এটির আয় আগের বছরের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ারের দামও অনেক কমেছে। সুতরাং বেসরকারি খাতের ব্যবসা খারাপ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বেই।