কোরবানির গরু কেজি দরে বিক্রি

পিয়র হারভেস্ট বি ডি ডট কম–এর খামারে কোরবানির গরু ওজন করা হচ্ছে।  প্রথম আলো
পিয়র হারভেস্ট বি ডি ডট কম–এর খামারে কোরবানির গরু ওজন করা হচ্ছে। প্রথম আলো

আস্ত গরুর ওজন হচ্ছে ডিজিটাল মেশিনে। কোরবানির বাজার সামনে রেখে প্রতি কেজি গরুর দাম রাখা হচ্ছে ৩৯০ টাকা। কেজি দরে গরু বিক্রির এমন একটি খামার গড়ে উঠেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিসডাং ডাংপাড়া গ্রামে। 

এই খামার মালিকের দাবি, তাঁদের খামারে গরুকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। গরু দেখে পছন্দ হলে কিছু টাকা বায়না করে গরু খামারেই রেখে আসা যায়। কোরবানির আগে সুবিধাজনক সময়ে ক্রেতা গরু নিয়ে আসতে পারেন। ওই সময় পর্যন্ত খামারে গরুকে খাওয়ানোর জন্য আলাদা কোনো অর্থ দিতে হবে না। টাকা পরিশোধের সময় গরুর যে ওজন হবে শুধু সেই হিসেবে দাম দিতে হবে। ওই খামারের লোকজন বলছেন, তাঁরা হিসাব করে দেখেছেন গরুর মোট ওজনের ৬৫ শতাংশ খাওয়ার মাংস পাওয়া যায়। তিন বছরেই তাঁদের খামারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ২৫ জুলাই থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁদের খামারের ৫০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। আর বিক্রয়যোগ্য ২৫টি গরু খামারে রয়েছে। এই খামার থেকে এবার সর্বোচ্চ ৮০০ কেজি ওজনের একটি গরু বিক্রি করা হয়েছে। এটি ‘ব্রাহামা’ জাতের। এ ছাড়া রয়েছে ৬০০ কেজি ওজনের বলদ ও সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ওজনের ষাঁড়।

এই খামারের মালিকের নাম তালহা জামিল। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। থাকেন ঢাকায়। পবায় দেড় বিঘা জমির ওপরে তিনি এই খামার গড়ে তুলেছেন। পাশেই এক বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করা হয়েছে। অন্য জায়গায় আরও চার বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করা হয়েছে। আর ১৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। সবই গরুর খাবার তৈরির জন্য। খামারে ছয়জন কর্মচারী রয়েছেন। সবার বেতন ১০ হাজার টাকা করে। আর খাওয়া থাকা চিকিৎসা ব্যয় প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে। 

>কোরবানির বাজার সামনে রেখে প্রতি কেজি গরুর দাম রাখা হচ্ছে ৩৯০ টাকা
আস্ত গরুর ওজন হচ্ছে ডিজিটাল মেশিনে


গতকাল শনিবার দুপুরে এই খামারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে গরু কিনতে এসেছেন নগরের বহরমপুরের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা। তিনি দুটি গরু ওজন করে দেখলেন। একটি গরুর ওজন হলো ৩৪৮ কেজি ৫০০ গ্রাম। আরেকটির ৩৩৯ কেজি ৫০০ গ্রাম। তাঁর পছন্দ প্রথম গরুটি। কিন্তু ওই গরুটি নেওয়ার জন্য এর আগেই একজন ক্রেতা এসে বায়না করে গেছেন। গোলাম মোস্তফা বলেন, তাঁরা তো পেশাদার লোক নন। অনেক সময় অনুমান ভুল হয়। মাংস কমবেশি হয়। এই ক্ষেত্রে কোনো আশঙ্কা নেই। নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ। বাজারে দালালের ভয় এখানে নেই। আবার কিনে এখানেই রেখে দেওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, যাঁরা ব্যস্ত মানুষ এবং যাঁদের বাড়িতে গরু রাখার জায়গা নেই, তাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা খুবই ভালো। তা ছাড়া এখানে গরুকে কী খাবার খাওয়ানো হচ্ছে, তা–ও দেখা যাচ্ছে। এসব বিবেচনা করেই তিনি এখানে গরু কিনতে এসেছিলেন। 

গরু ওজন করার জন্য ডিজিটাল মিটারযুক্ত একটি স্কেল রয়েছে। এর ভেতরে গরু ঢুকিয়ে দিলেই ডিজিটাল মিটারে ওজন দেখা যাচ্ছে। 

খামারের ব্যবস্থাপক আজিজুল হক বলেন, এখানে ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে ওজন করে দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্রেতা বা বিক্রেতা কারও ঠকার কোনো ভয় নেই। তাঁরা হিসাব করে দেখেছেন মোট গরুর ৬৫ শতাংশ খাওয়ার মাংস পাওয়া যায়। সেই হিসেবে ৩৯০ টাকা কেজি দরে গরু কিনলে মাংসের দাম পড়ে ৬০০ টাকা কেজি। আজিজুল হক বলেন, তিন বছর ধরে তাঁরা এই খামার চালু করেছেন। প্রতিদিন বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে ক্রেতারা খামারের গরু দেখতে আসেন। তিনি বলেন, তাঁরা বাজার থেকে হাড্ডিসার গরু কেনেন। তিন চার-মাস গরুগুলোকে পোষেন। তারপর বিক্রি করেন।