ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি

এ বছর কোরবানির জন্য ছোট ও মাঝারি আকারের গরুই বেশি কিনছেন ক্রেতারা। গতকাল গাবতলীর পশুর হাটে।  ছবি: প্রথম আলো
এ বছর কোরবানির জন্য ছোট ও মাঝারি আকারের গরুই বেশি কিনছেন ক্রেতারা। গতকাল গাবতলীর পশুর হাটে। ছবি: প্রথম আলো

লালচে রঙের মাঝারি আকারের দেশি ষাঁড় কিনেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর আফতাবনগর হাট থেকে বের হওয়ার সময়ই উৎসুক মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। উত্তর দেওয়ার সময় তাঁকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। ষাঁড়ের দাম ৭৬ হাজার টাকা। 

বাড্ডার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, কোরবানির জন্য মাঝারি আকারের গরু কেনার পরিকল্পনা ছিল। তাঁর বাজেট ছিল ৮০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত যে গরুটি কিনেছেন, বিক্রেতা প্রথমে তার দাম চেয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। 

গতকাল রাজধানীর আফতাবনগর, ভাটারার সাঈদনগর, বছিলা, উত্তরা ও গাবতলী পশুর হাট থেকে গরু কিনে বের হওয়া বেশির ভাগ মানুষকেই ইকবাল হোসেনের মতো হাসিখুশি দেখা গেছে। এসব হাটে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গরু কেনা ৩০ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। দাম নিয়ে কারও কথাতেই অসন্তুষ্টি নেই। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর দাম তুলনামূলক কম বলেই জানালেন তাঁরা।

তবে হাটে গরু কেনার জন্য দরদাম করতে থাকা ক্রেতাদের কয়েকজনের বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। রোববার হাটের শেষের দিকে দাম আরও কমতে পারে।

দাম নিয়ে পাঁচটি পশুর হাটের ১৫ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বললেন, ছোট আকৃতির গরু ৪০-৫৫ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের গরু ৬০-৮৫ হাজার টাকা আর বড় আকৃতির গরু ১ থেকে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাঁরা বলেন, এবার সব হাটেই পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু আছে। দামও তাই তুলনামূলক কম। 

বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন হাটে প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতার ভিড় (গতকাল দুপুর পর্যন্ত) নেই। এটিও দাম কমার কারণ। 

>

বিক্রেতারা বলছেন, অন্যবারের তুলনায় এবার গরুর দাম কম
দাম নিয়ে অখুশি নন ক্রেতারা

আফতাবনগরের হাটে কুষ্টিয়া থেকে ৩০টি মাঝারি আকৃতির গরু এনেছেন ব্যাপারী সেলিম মিয়া। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১২টি গরু বিক্রি করেছেন। এবার দাম কম বলে জানান তিনি। রাতের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা তাঁর। 

উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের হাটে বিকেলে গরুর দরদাম করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল খান। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে দাম বেশি না। হাটে পর্যাপ্ত গরু আছে।

এ বছর রাজধানীর ২১টি জায়গায় অস্থায়ী পশুহাট বসেছে। এর বাইরে গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট তো রয়েছেই। প্রতিটি হাটে পর্যাপ্ত পশু এসেছে বলে জানান ইজারাদারেরা। তাঁরা বলেন, খামারিরা বেশি গরু এনেছেন। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে প্রচুর পশু এসেছে।

গাবতলীর হাটে ‘রাজা-বাদশাহ’ নামে বড় আকারের দুটি গরু নিয়ে এসেছেন ফরিদপুরে ব্যাপারী মো. আরিফ। এর মধ্যে ‘রাজার’ জন্য তিনি দাম চাইছে ৮ লাখ টাকা। ১০ লাখ টাকার কমে ‘বাদশাহ’ ছাড়বেন না তিনি। তবে দুটি গরুর কোনোটির দাম চার লাখের বেশি বলেননি কোনো ক্রেতা।

জামালপুরের বকশীগঞ্জের ব্যবসায়ী দুলাল গত বুধবার এই হাটে মাঝারি আকারের ২৮টি গরু নিয়ে আসেন। গত দুই দিনে তিনি ৯টি গরু বিক্রি করেছেন। দুলালের কাছ থেকে গতকাল বিকেলে ৭৮ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন মিরপুরের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিন কেনার ইচ্ছা ছিল। তবে পছন্দ হওয়ায় কিনে ফেলেছি। দামটাও নিয়ন্ত্রণে।’

গাবতলী হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. সানোয়ার বলেন, এখানে প্রায় ৫০ হাজার গরু রাখার জায়গা আছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৩৫ হাজার গরু এসেছে। শনিবার রাতের মধ্যে আরও কয়েক হাজার গরু আসবে।