ভালো চলছে গ্রামীণ ব্যাংক মুনাফাও বাড়ছে

ভালোই চলছে গ্রামীণ ব্যাংক। দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বেশ বেড়েছে। সদস্যসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপুলসংখ্যক টাকা গ্রামের গরিব নারীদের কাছেই গেছে।

এদিকে নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে সাড়ে তিন বছর পর প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ নির্বাচন হয়েছে। বদৌলতে নারী সদস্যদের মধ্য থেকে নয়জন নতুন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যও পেয়ে গেছে গ্রামীণ ব্যাংক। আইনি জটিলতা ও নির্বাচন কমিশনার খুঁজে না পাওয়ার কারণেই মূলত আটকে ছিল প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন। 

মাঠপর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংকের শক্তিশালী কাঠামোর কারণে ঋণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলেছে। অথচ আট বছর ধরে ব্যাংকটির নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। সাড়ে তিন বছর নির্বাচিত পর্ষদ ছিল না। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলে যাওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যক্রমে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। 

জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের মো. মনিরুল হক বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ভালোই চলছে। মুনাফা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো বেশ শক্তিশালী। 

সাড়ে তিন বছর পর পর্ষদ নির্বাচন

২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন থেকে শুধু সরকার–মনোনীত বোর্ড দিয়েই গ্রামীণ ব্যাংক প্রায় সাড়ে তিন বছর চলেছে। সেই সময় নির্বাচনের জন্য নতুন নির্বাচন বিধিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা তা নিতে রাজি হয়নি। পরে বিধিমালা সংশোধন করা হয়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক উল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূল পর্যায় থেকে ধাপে ধাপে নয়জন নারী তিন বছরের জন্য পর্ষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের বেবি, কুমিল্লার হাসিনা, সিলেটের শামীমা, ময়মনসিংহের নুরুন নাহার, টাঙ্গাইলের খালেদা, রংপুরের নুরুন্নাহার, বগুড়ার সামিনা, যশোরের বেলী ও বরিশালের মুকুল। 

২০১১ সালের মে মাসে মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চলে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত স্থায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই পর্যন্ত আট বছর ধরে পাঁচজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কয়েক দিন আগে ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক মারা গেছেন। এখনো নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়নি সরকার।

>সাড়ে তিন বছর পর পর্ষদ নির্বাচন হলো
পুঞ্জীভূত ঋণ বিতরণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে

এখন মুনাফা বাড়ছে

২০১২ সাল থেকে টানা চার বছর গ্রামীণ ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। যেমন ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে দাঁড়ায় ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে তা কমে ২৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৬ সালে ঘুরে দাঁড়ায় ব্যাংকটি। ওই বছর মুনাফা করে ১৩৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে গ্রামীণ ব্যাংক মুনাফা করেছে ২২৭ কোটি টাকা। এটি ১৯৮৩ সালের পর সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ড। ২০১৮ সালের লভ্যাংশ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মনে করেন, মুনাফা আরও বাড়তে পারে। 

গ্রামীণ ব্যাংকের ময়মনসিংহ অঞ্চলের সদস্য ও সাবেক পর্ষদ সদস্য তাহসিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ব্যাংকের মাঠপর্যায়ে শক্তিশালী কাঠামোর কথা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। মাঠপর্যায়ের লাখ লাখ নারী সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করছি। তাই ২০১০ সালের পর যে ঝড় গেল, তারপরও গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো প্রভাব পড়েনি।’ তাঁর মতে, প্রধান কার্যালয়ে যা–ই হোক না কেন, মাঠপর্যায়ে নিয়মমাফিক সবকিছু চলছে।

সুখবর হলো, গ্রামীণ ব্যাংকের পুঞ্জীভূত ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত মে মাসে ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ জুলাই মাসে এসে পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৪ সালে পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বরে অবশ্য এর পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি মহসীন রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালে সরকার–ঘোষিত পে–স্কেল বাস্তবায়নের কারণে মুনাফা কিছুটা কমেছিল। তবে তখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকটির মুনাফা বাড়াতে ঋণ কর্মসূচিগুলোকে বেগবান করে তুলতে মনোযোগী হন। এর সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।

২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লাখ বেড়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যাংকটিতে সদস্য ছিল ৮৩ লাখ ৪০ হাজার, যা গত জুলাই মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ৬১৬ জনে। এর মধ্যে প্রায় ৯৭ ভাগই নারী সদস্য। তবে গত আট বছরে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা বেড়েছে মাত্র তিনটি। এখন ব্যাংকটির মোট শাখা ২ হাজার ৫৬৮টি।