শেয়ারবাজারে আবারও অস্থিরতা

দেশের শেয়ারবাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। টানা পতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমেছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ২৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজারে নেমে এসেছে। দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি গতকাল কমেছে ১১০ পয়েন্ট। এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন দেশের শেয়ারবাজারে সূচক কমেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে টানা এ দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কারসাজি ছাড়া বাজারের এ হঠাৎ পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বর্তমানে বাজারে বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আবারও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ফলে ক্রেতার অভাব রয়েছে। একদিকে ক্রেতার অভাব, অন্যদিকে টানা পতনে আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিক্রির প্রবণতা বেড়ে গেছে। এতে করে বাজারে টানা দরপতন চলছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরের বাজারের আচরণ পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, কিছুদিন পরপরই উত্থান–পতনের ঘটনা ঘটছে। যার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তাই আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে বাজারে এ ধরনের উত্থান–পতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা কম দামে শেয়ার কিনতে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পতন ঘটায়। আবার কিছুদিন পর দাম বাড়িয়ে বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেয়। এমনটাই চলে আসছে কয়েক বছর ধরে।

পতনের বাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই। যেখানে ভালো মানের কোম্পানির শেয়ারের টানা দরপতন চলছে, সেখানে মাঝারি ও নিম্নমানের কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে স্বাভাবিক মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, কারসাজির মাধ্যমেই এসব শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকার বাজারে কয়েক দিন ধরে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে মুন্নু সিরামিক। গত সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৩ টাকা। লেনদেনে ঢাকার বাজারে গতকাল দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মুন্নু স্টাফলার। গত ছয় কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে। লেনদেনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল স্টাইল ক্রাফট। গত সাত কার্যদিবসে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম ১৪৭ টাকা বেড়েছে। এ তিনটি কোম্পানিই স্বল্প মূলধনি। কিছু দিন আগেও কারসাজির মাধ্যমে এ তিন কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে।

ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি কমে ৫ হাজার ৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। গত ২২ জুলাইয়ের পর এটিই ডিএসইএক্স সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। সূচকের ৫ হাজার পয়েন্টের সীমাকে শেয়ারবাজারে মনস্তাত্ত্বিক সীমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে সূচকটি কমে ৫ হাজারে নেমে আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবার চরম হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, কিছুদিন পরপর বাজারে অস্বাভাবিক উত্থান–পতনের ঘটনা ঘটছে। স্বাভাবিক নিয়ম ও যৌক্তিক কারণে যেকোনো সময় যেকোনো শেয়ারের দামের উত্থান–পতন হতেই পারে। কিন্তু বাছবিচার ছাড়া সব ধরনের শেয়ারের দাম কমে যাওয়া কখনো বাজারের স্বাভাবিক আচরণ হতে পারে না। সাধারণ চোখে বাজারের অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬৯টি বা অর্ধেকেরই দাম কমেছে। বেড়েছে কেবল ৩২ শতাংশ বা ১০৯টির দাম। আর অপরিবর্তিত ছিল ৬১টির দাম। কমে গেছে লেনদেনও। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ৪৮ কোটি টাকা কমে নেমে এসেছে ৩৯৫ কোটি টাকায়। ঢাকার বাজারে লেনদেন কমলেও চট্টগ্রামে এদিন লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ২ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি টাকা।