এখন থেকে অ্যাপেই জাহাজ ভাড়া

ঘরে বসেই ভাড়া করা যাবে দেশের ভেতরে নৌপথে পণ্যবাহী যান (লাইটার শিপ)। জানা যাবে ভাড়া করা যানটি এখন ঠিক কোথায় আছে, কবে গন্তব্যে পৌঁছাবে। ভাসমান জলযানে থাকা পাথর, বালুর মতো পণ্যের মান যাচাই করে তা কেনাও যাবে ঘরে বসে, অনলাইনে। এসব সুবিধাসহ নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ নিয়ে এসেছে প্রযুক্তিভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জাহাজী।

সবকিছু যখন ঢাকাকেন্দ্রিক, তখন এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করেছে খুলনা থেকে। এখন বরিশালের স্বরূপকাঠি অঞ্চলে চলছে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে জাহাজী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা দুই তরুণ কাজল আবদুল্লাহ ও অভিনন্দন জোতদার এবং খুলনার ব্যবসায়ী শেখ বাহাউদ্দিন যৌথভাবে নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

এ উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশে জাহাজীই প্রথম অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্যবাহী জাহাজের জন্য অ্যাপভিত্তিক বুকিং এবং ট্র্যাকিং সেবা নিয়ে এসেছে। বুকিং সেবার মাধ্যমে একজন সাপ্লায়ার জাহাজ ভাড়া, অবস্থান ও ধারণক্ষমতা যাচাই করে লাইটার জাহাজ ভাড়া করতে পারবেন। আর ট্র্যাকিং সেবার গ্রাহক হলে জাহাজমালিক, ক্যারিয়ার এবং সাপ্লায়ার তাঁদের জাহাজের ও ট্রিপের সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখতে পারবেন।

জাহাজীর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজল আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, লাইটার জাহাজ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা অচল। কিন্তু এখানে জাহাজ ভাড়া করা ও পণ্য পরিবহনে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। তাদের সবাই অনুমানের ওপর ব্যবসা পরিচালনা করছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চলন্ত জাহাজ থেকেই মুখের কথায় বালু, কয়লা, পাথরের মতো পণ্য বেচাকেনা হয়। কিন্তু জাহাজের অবস্থান এবং পণ্যের মান যাচাই করে কেনার সুযোগ না থাকায় নানা জটিলতা তৈরি হয়। এ জটিলতা দূর করবে জাহাজী।

সম্প্রতি খুলনার কেডিএ অ্যাভিনিউয়ে জাহাজীর কার্যালয়ে কথা হয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। তাঁরা জানান কীভাবে এই ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসে। জাহাজীর সহপ্রতিষ্ঠাতা অভিনন্দন জোতদার ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালে নিজের শহর খুলনায় সাপ্লাই ও লজিস্টিকস ব্যবসা শুরু করুন। ব্যবসার কাজে পণ্যবাহী জাহাজ ভাড়া করতে হয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু জাহাজ কার কাছ থেকে ভাড়া করতে হবে বা জাহাজটি কোথায় আছে, তা জানতে লোকের কথার ওপর ভরসা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এই ব্যবসা করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হন তিনি। এসব নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করেন কাজল আবদুল্লাহর সঙ্গে। একসময় তাঁরা অ্যাপভিত্তিক এ উদ্যোগের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ী শেখ বাহাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনিও ইতিবাচক মনোভাব দেখান। এরপর এই তিনজন খুলনা থেকে শুরু করেন নতুন ব্যবসার উদ্যোগ জাহাজী। জাহাজী অ্যাপের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে গুগলের প্লে স্টোরে।

জাহাজীতে এখন কর্মরত আছেন ১২ জন। আরও ৮ জন শিগগিরই যোগ দিচ্ছেন। তাদের ব্যতিক্রমী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের নজর কেড়েছিল। তাদের দেওয়া চাকরির বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, নির্দিষ্ট বয়স ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। শুধু ৫০০ শব্দে লিখতে হবে প্রার্থী কেন ওই পদের জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করেন। জাহাজীতে পদের নামগুলো অভিনব। এখানে রয়েছে টপ সিক্রেট অফিসার, এক্সিকিউটিভ অব ফার্স্ট ইম্প্রেশন, মাস্টার অব কয়েন এবং পিপলস অফিসার।

জাহাজীর টপ সিক্রেট অফিসার মো. সবুজ বলেন, কোনো সিজিপিএ লাগবে না!—জাহাজীর চাকরির এই বিজ্ঞাপন দেখে তিনি প্রথম আকৃষ্ট হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাজীর নানা কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছিল, প্রতিষ্ঠানটির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। এ কারণে তিনি আবেদন করেন। যেমনটি ভেবেছিলেন, চাকরিতে যোগ দিয়ে তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন। এখানে কেউ কাউকে স্যার ডাকেন না। সবাই ভাই। জাহাজীতে ভুল করার পরও প্রচুর সুযোগ দেওয়া হয়।