ব্যয়বহুল বিয়ে মানেই টেকসই নয়

‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই/ আকাশ তো বড়’—১৯৫৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত টালিউডের ছবি ইন্দ্রাণীর এই গানে লিপসিং করেছেন (ঠোঁট মিলিয়েছেন) মহানায়ক উত্তম কুমার ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও গীতা দত্ত। সেই থেকে আজ পর্যন্ত গানটি বাঙালি নর-নারীর রোমান্টিক সম্পর্কের স্মারক হয়ে আছে। ছবিতে দেখা যায়, বিয়ের পর উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন ছোট একটি বাড়িতে উঠেছেন। জানালা গলে চাঁদের আলো পড়েছে ঘরে, ঠিক এমন মুহূর্তে এ গানটি গাইছেন তাঁরা। মর্মার্থ হলো, ভালোবাসা থাকলে ঘর ছোট হলেও ক্ষতি নেই, কারণ আকাশ তো অনেক বড়, অর্থাৎ টাকাপয়সা বড় ব্যাপার নয়। 

ভালোবাসার এই চিরন্তন আবেদনের ব্যাপারটি আবারও প্রমাণিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমিক এনকোয়ারি নামের এক সাময়িকীর সমীক্ষায়। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ব্যয়বহুল বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন বা বাগদানে দামি আংটি দিলেই যে সেই বিয়ে সুখের হয় বা তার স্থায়িত্ব বেশি হয়, তা নয়। আবার ব্যাপারটা এমনও নয় যে খরচ কম করলেই বিয়ের স্থায়িত্ব বাড়ে বা দাম্পত্য জীবন সুখের হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজার দম্পতির ওপর সমীক্ষা চালিয়ে সাময়িকীটি এমন সিদ্ধান্তে এসেছে। 

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, বাগদানে যাঁরা বেশি দামি আংটি দিয়েছেন, তাঁদের অনেকে পরবর্তী জীবনে ঋণের জাঁতাকলে পড়েছেন। বাগদানের আংটিতে যাঁরা ১ হাজার ডলারের কম খরচ করেছেন, তাঁদের বিবাহজনিত ঋণের চাপে পিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ৫ থেকে ১০ হাজার ডলারের আংটি কেনা লোকদের চেয়ে ৮২ থেকে ৯৩ শতাংশ কম। সে জন্য প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, যেহেতু অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্পর্ক আছে, সেহেতু যাঁরা ধারকর্জ করে বিয়েতে বেশি ব্যয় করেন, তাঁদের বরং বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি, যাঁরা বিয়েতে কম খরচ করেন তাঁদের তুলনায়। 

আবার খরচ কম করলেই যে বিয়ে সুখের বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা–ও নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাগদানের আংটির দাম ৫০০ ডলারের কম হলে নারীদের বেলায় বিচ্ছেদের ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়। অন্যদিকে ২ থেকে ৪ হাজার ডলারের আংটি কেনা হলে নারী-পুরুষ সবার বেলাতেই বিচ্ছেদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার বিয়েতে ২০ হাজার ডলার বা তার চেয়ে বেশি খরচ করা হলে নারীদের বেলায় বিচ্ছেদের ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে বিয়েতে ২০ হাজার ডলার বা তার চেয়ে বেশি খরচ হলে বিচ্ছেদের আশঙ্কা ৫ থেকে ১০ হাজার ডলারের বিয়ের চেয়ে সাড়ে তিন গুণ বেশি থাকে।

যুগে যুগে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে দাম্পত্য বা যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালোবাসা বা সদিচ্ছাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই এখন বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে পৃথক শিল্পই গড়ে উঠেছে। এরা মানুষকে বিলাসবহুল বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনে উৎসাহিত করে। এ লক্ষ্যে অনেক জায়গাতেই বিয়েসংক্রান্ত সাময়িকী বের হয়। ভালোবাসাকে এভাবে একরকম পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। এমনকি বিয়েতে হীরার আংটি দেওয়ার চল শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডায়মন্ড ইজ ফরএভার’ বা ‘হীরা চিরকালের’ স্লোগান চালু করে ডি বিয়ার্স নামে একটি হীরা কোম্পানি। 

মোদ্দাকথা হলো, ভালোবাসা ছাড়া সবকিছুই বৃথা। তবে কারও সামর্থ্য থাকলে বিয়েতে অনেক ধুমধাম করতেই পারেন, কিন্তু সেটা সুখের নিশ্চয়তা দেয় না।