ওয়ারেন বাফেটের আট পরামর্শ

টাকাওয়ালা একজন মানুষের সঙ্গে অভিজ্ঞ মানুষের সাক্ষাৎ হলে ব্যাপারটা এ রকম হবে যে, টাকাটা যাবে অভিজ্ঞ মানুষের হাতে আর টাকাওয়ালা মানুষ পাবে অভিজ্ঞতা। ৮৭তম জন্মদিনে বিনিয়োগ নিয়ে পরামর্শ চাওয়া হলে ওয়ারেন বাফেট ঠিক এ কথাটি বলেছিলেন। তাঁর মতে, অভিজ্ঞতাই সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার চাবিকাঠি। আর নতুন বিনিয়োগকারীরা অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখতে পারেন। সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে ওয়ারেন বাফেটের সেরা আটটি উপদেশ দেখে নেওয়া যাক:

১. বহুমুখী বিনিয়োগ

ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, যাঁরা বিনিয়োগ সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না, তাঁদের এক জায়গায় বিনিয়োগ না করে নানা জায়গায় বিনিয়োগ করা ভালো। তাঁর কথা হলো, বৃষ্টির সঙ্গে সোনা ঝরলে বালতিটা বাড়িয়ে দিন, মগ বাড়িয়ে দিয়ে লাভ কী। 

২. নিজের জন্য বিনিয়োগ 

নিজের সামর্থ্য বাড়াতে বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ। সবাই তো আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে বড় মুনাফা করতে পারবে না, তাই নিজের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে অনেকে ভালো ক্যারিয়ার করতে পারে—এসব মানুষের বেলায় এটাই সেরা বিনিয়োগ।

৩. নিজের কাজে আস্থা রাখুন

বাফেট মনে করেন, নিজের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে আস্থা রাখাটা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আপনার সব সময় মনে হয় যে অন্যরা সঠিক আর আপনি বেঠিক। এটা না করে পাঠাভ্যাস করুন এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। নিজের জ্ঞানের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করুন। অন্যরা কী বলল, তা খুব একটা শোনার দরকার নেই।

৪. ধারণা থাকলে তবেই বিনিয়োগ

যে ব্যবসা আপনি পুরোপুরি জানেন না, সেই ব্যবসায় বিনিয়োগ না করাই ভালো। কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার আগে জানতে হবে, সেই কোম্পানি কীভাবে ব্যবসা করে এবং সেই ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, আর তা করতে ১০ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। বাফেট বলেন, ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি এর আগামাথা বের করতে না পারলে অন্য কোম্পানির মূল্যায়ন শুরু করেন। 

৫. ঠিক খবরে গুরুত্ব দিন

ওয়ারেন বাফেটের সেরা পরামর্শগুলোর একটি হচ্ছে, সব সংবাদেই বেশি গুরুত্ব দেবেন না, অর্থাৎ বিনিয়োগসংক্রান্ত খবর দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। তিনি ৯৯-১ নিয়মে বিশ্বাস করেন। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী যত আর্থিক খবর পড়েন, তার মাত্র ১ শতাংশ খবরের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন। দেখা যায় যে খারাপ খবর পেলেই তাঁরা শেয়ার বিক্রি করে দেন। বাফেট মনে করেন, যে কোম্পানি বহু বছর ধরে ব্যবসা করছে, তাদের পক্ষে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সমস্যা নয়। মানুষ অনেক সময় বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়। 

৬. শেয়ার কেনা ব্যবসার অংশ কেনা

ধরুন, বাড়ির পাশের মোড়ে একটি দোকানের মালিকানা অংশীদারি কিনছেন। স্বাভাবিকভাবেই তখন আপনি প্রতিযোগিতা, পণ্যের দাম, সরবরাহব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে ভাববেন। শেয়ার কেনার সময়ও আপনাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে। শেয়ার তো নিছক কাগজের টুকরা নয়, শেয়ার কেনা মানে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশীদারি কিনছেন।

৭. ভুল থেকে শিক্ষা

অনেকেই ভাবতে পারেন যে ওয়ারেন বাফেট ভুল করতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি তো ভুল করেনই, এমনকি জীবনে অনেক বড় ভুলও করেছেন তিনি। বাফেটের পরামর্শ হলো, ভুলের রেকর্ড রাখুন, যাতে গড়বড়টা কোথায় হয়েছে তা বোঝা যায় এবং একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আবার ভুলের কথা সন্তান ও নাতি-নাতনিদের কাছেও বলা উচিত; যাতে তারা সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

৮. এক দিনের ব্যবসায়ী হওয়া যাবে না

ওয়ারেন বাফেট দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পক্ষপাতী। তিনি মনে করেন, শেয়ার কিনে ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। একটি কোম্পানির শেয়ার তিনি দশকের পর দশক ধরে রাখার পরামর্শ দেন। তিনি মনে করেন, ধৈর্যশীল বিনিয়োগকারীদের কাছে সময় এক দারুণ বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়। বাফেটের বাণী: ‘১০ বছর কোনো শেয়ার ধরে রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা ১০ মিনিটের জন্য কেনার কথা চিন্তাও করবেন না।’ 

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন