ভবিষ্যৎ তৈরি করাই সফলতা

>
ইন্দ্র নুয়ির নেতৃত্বে ১২ বছরে পেপসিকোর রাজস্ব দ্বিগুণ বেড়েছে। এর অর্ধেক আবার এসেছে স্বাস্থ্যকর পণ্য থেকে (২০০৬ সালের পর ৩৮ শতাংশ বেড়েছে)। ২০১৯ সালে তিনি পেপসিকো ছেড়েছেন। একজন নারী হিসেবে পুরুষশাসিত সমাজে তিনি দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। পেপসিকোর মতো শত শত কোটি ডলারের কোম্পানি পরিচালনার পর ইন্দ্র যে অভিজ্ঞতার ঝুলি অর্জন করেছেন, সেসবের আলোকে তাঁর ৭টি উপদেশ: 

১. ভারসাম্য খুঁজে পাওয়াই মূল কথা: নারীর কাছে কর্মজীবনের পথ সব সময়ই বন্ধুর ছিল। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাহীর কাজটা যেমন পূর্ণকালীন, তেমনি মায়ের কাজটাও পূর্ণকালীন। আর ভারতের প্রেক্ষাপটে ঘরের মেয়ে বা বউ হওয়াও পূর্ণকালীন কাজ। সে কারণে সব ভূমিকায় নারী দারুণ কাজ করবে, তা ভাবা পাগলামো। সে জন্য তাঁর প্রথম উপদেশ হচ্ছে, নারীদের সঠিক জীবনসঙ্গী বেছে নিতে হবে। জীবনসঙ্গীর সহযোগিতা পাওয়া না গেলে নারীর পক্ষে কিছু করে ওঠা সত্যিই কঠিন; অন্য কথায়, সঠিক জীবনসঙ্গীই জীবনে প্রকৃত পরিবর্তন নিয়ে আসবে। 

২. কাজের সময় ও ধরন নিয়ে নমনীয় থাকা: নারীদের কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্য বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ইন্দ্র নুয়ি। এতে বাঁধাধরা কর্মসময় ও কাজের হাত থেকে মুক্তি মেলে। নারীদের কাজের গুণগত মানের ওপর জোর দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। 

৩. খেলাধুলা সফলতার চাবিকাঠি: সব পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ৭৫ শতাংশ নির্বাহী কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশ নিয়েছেন। এতে তাঁদের পক্ষে ভালো দল গঠন ও নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা সম্ভব হয়। সে জন্য নারীদের তিনি প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশ নিতে উৎসাহিত করেন।

৪. ভাষায় লিঙ্গ বিভাজন দূর করা: মানুষকে বিশেষ কোনো পরিচয় দিয়ে চিহ্নিত করা ঠিক নয়, তাঁকে বিচার করতে হবে কাজ দিয়ে। নারীকে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়, ‘মেয়েটা অসাধারণ, কিন্তু...’। আবার পুরুষকে পদোন্নতি দেওয়ার বেলায় বলা হয়, ‘তিনি বেশ ভালোই আর...’। কোম্পানির নেতৃত্বকে এসব শব্দবন্ধ পরিহার করতে হবে। 

৫. সবকিছু ভালোভাবে করুন: নারীদের প্রতি ইন্দ্র নুয়ির অনুরোধ হলো, তারা যেন কাজেই মনোনিবেশ করে। কাজের মান যত ভালো হবে, ততই মানুষ নারীর গায়ে লেবেল সাঁটার সুযোগ কম পাবে। আমি কোথায় যাচ্ছি, তা নিয়ে চিন্তা না করে যে কাজটা আসছে, তা ভালোভাবে করার চেষ্টা করতে হবে।

৬. উত্তরসূরি নির্বাচনে তৎপর হোন: কোম্পানিতে ১০ থেকে ১৫ জন সম্ভাব্য উত্তরসূরি নির্বাচন করে তাঁদের পরিচালনা পর্ষদের কাছে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দিতে হবে। তাঁদের বিভিন্ন ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বের হয়ে আসবেন। সবাই তো আর শীর্ষ পদে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না, তাঁদের মধ্যে তিন–চারজন বেরিয়ে আসবেন।

৭. ভবিষ্যৎ তৈরি করাই সফলতা: উত্তরসূরি তৈরি করাই পরিচালনা পর্ষদের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। বর্তমান প্রধান নির্বাহীর জন্যও এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যাপারটা হলো, আপনি কতটা ভালো কাজ করলেন তা দিয়ে নয়, আপনার উত্তরসূরি কোম্পানি কতটা ভালোভাবে কোম্পানি পরিচালনা করল, সেটাই আপনার সফলতার মানদণ্ড।

দ্য সিইও ম্যাগাজিন, জুলাই সংখ্যা থেকে অনুবাদ—প্রতীক বর্ধন