আমানতের সিংহভাগই ঢাকার

ফ্ল্যাট, জমি ও বাড়ি বন্ধক রেখেই বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আর বেশি ঋণ গেছে শিল্প খাতে। এরপরই বেশি ঋণ গেছে পণ্য বাণিজ্য, ভোক্তা ঋণ ও নির্মাণ খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন তৈরি শুরু করেছে। গত মার্চভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে ৫৩২টি। এর মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহক থেকে কোনো আমানত নিতে পারে না, যাদের বলা হয় ‘নন-ডিপোজিটরি’ প্রতিষ্ঠান। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান আছে নাজুক পরিস্থিতিতে। এর মধ্যে পিপলস লিজিংকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো দেশের অর্ধেক জেলায় পৌঁছাতে পারেনি। রাজধানীর বাইরে অন্য যেসব জেলায় শাখা বেশি, সেখানেই ঘুরেফিরে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান খুব বেশি নতুন গ্রাহকও তৈরি করতে পারছে না।

যদিও ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিউ এম শরিফুল আলা প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত উৎপাদনশীল খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণ দিতে নতুন নতুন খাতও তৈরি করেছে, যেখানে ব্যাংকগুলো ছিল না। যেসব জায়গায় অর্থনৈতিক গতি আছে, সেখানেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলেও যাবে। তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছুদিন আগে যে তারল্যসংকট ছিল, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে।

জানা যায়, গত মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে। এসব আমানত এসেছে ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৫১৯টি হিসাব থেকে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৫ জন পুরুষ নিজের নামে ও ৮৯ হাজার পুরুষ প্রতিষ্ঠানের নামে আমানত জমা রেখেছেন। আর ৮১ হাজার ৪৭ জন নারী নিজের নামে ও ২৮ হাজার ৮৬৭ জন নারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা জমা রেখেছেন। যদিও ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ৪৫ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। ফলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের সিংহভাগই এসেছে ঢাকা বিভাগ থেকে। মোট হিসাবের মধ্যে ঢাকা বিভাগের হিসাবই ১ লাখ ৭১ হাজার
৪৫৪টি। ঢাকা বিভাগের জমার পরিমাণ ৪৩ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।

অপরদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত মার্চ পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। ২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৬টি হিসাবের মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে চলতে পারে না। কারণ, তাদের চলতি হিসাব নেই। শুধু মেয়াদি আমানত নিতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬৯ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে গেছে ১০ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে গেছে ৫৯ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এসব ঋণ গেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৬ হিসাবের মাধ্যমে। ঋণের বড় অংশই ঢাকা বিভাগে। আবার দেশের অর্ধেক জেলার গ্রাহকই কোনো ঋণ পাননি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে ঋণ দিয়েছে, আবার শেয়ারবাজারেও ভালো অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঋণের ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকায় বিতরণ করা হয়েছে শিল্পের মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধন হিসেবে। ১৮ হাজার ৭৯ কোটি টাকা গেছে পণ্য বাণিজ্য খাতে। ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ গেছে আবাসন ও আবাসনসংক্রান্ত খাতে। আর ১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা পরিবহন খাতে। এর মধ্যে সড়ক, নৌ, বিমান—এ তিন খাতেই অর্থায়ন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে ঋণ দিয়েছে, তার ৪০ শতাংশ গেছে আবাসন বন্ধক রেখে, যার পরিমাণ ২৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। ব্যক্তিগত গ্যারান্টির
বিপরীতে গেছে ৯ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। কোনো জামানত নেওয়া হয়নি, এমন ঋণ আছে ৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার।