পরিবার সঞ্চয়পত্র সবচে এগিয়ে

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলতে গ্রাহকদের ভিড়। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা। ছবি: প্রথম আলো
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলতে গ্রাহকদের ভিড়। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা। ছবি: প্রথম আলো

সঞ্চয়-বিনিয়োগে দেশের মানুষ এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটকেই (এনএসসি) গুরুত্ব দিচ্ছেন। আবার এসব বিনিয়োগকারীর কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র। সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ বিনিয়োগকারী এটি পছন্দ করেন। তাঁদের এই পছন্দের প্রধান কারণ হলো পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে অন্যগুলোর তুলনায় বেশি লাভ হয় বা মুনাফা পাওয়া যায়।

সঞ্চয়-বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পছন্দ হচ্ছে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্র। ২১ শতাংশ সঞ্চয়কারী এই শ্রেণির সঞ্চয়পত্র কিনতে পছন্দ করেন। এই সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশই পুরুষ। সবাই এটি কিনতে পারবেন—এই নিয়ম চালুর পর থেকে পুরুষেরা অধিক হারে এই সঞ্চয়পত্র কেনার প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেন।

গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জরিপে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৭৯ শতাংশই সঞ্চয়পত্র কিনতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কারণ, এটাকেই তাঁরা দেশে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ উপকরণ মনে করেন। ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে যে লাভ বা মুনাফা পাওয়া যায়, তা দেশের অন্য সব বিনিয়োগের চেয়ে বেশি। তবে মাত্র ১ শতাংশ লোক কর রেয়াত সুবিধা পাওয়ার জন্য সঞ্চয়পত্র কেনেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পরিবার সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছে মূলত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষ করে নারী এবং বৃদ্ধদের (যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি) জন্য। পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই নারী। আবার এই নারীদের ৬৬ শতাংশই হলেন গৃহবধূ। ৫৭ শতাংশ নারী জানান, তাঁরা প্রধানত স্বামী কিংবা মা-বাবার কাছ থেকেই টাকাপয়সা পেয়ে থাকেন।

জরিপমতে, মাত্র ৬ শতাংশ সঞ্চয়কারী পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনতে পছন্দ করেন। প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সেভিংস সার্টিফিকেট কেনেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হলেন অবসরপ্রাপ্ত। এ প্রসঙ্গে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার যদিও ভালো, তবু অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই এটির পরিবর্তে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। এর একটি বড় কারণ হলো পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্রের দরকার, যেগুলো বিশেষ করে বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিদের অনেকের পক্ষেই জোগাড় করা কঠিন। এ ছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ফেললে অনেকে তখন অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের প্রতি ঝোঁকেন, প্রধানত পরিবার সঞ্চয়পত্রে।

কেন সঞ্চয়পত্র কেনার দিকে ঝুঁকছেন—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল জরিপে। এর জবাবে ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাখা আমানতের বিপরীতে যে সুদ দেওয়া হয় তা দিন দিন কমছে বলেই তাঁরা সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করছেন। উত্তরদাতাদের ৭১ শতাংশই জানান, তাঁরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ার কথা শুনেছেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে শুনে থাকেন অল্প কিছু বিনিয়োগকারী।

জরিপ অনুযায়ী ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, ডাকঘর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র বেশি সহজলভ্য হওয়ায় তাঁরা সেখানেই যান। তাঁরা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) সুবিধার মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফা গ্রহণ করেন। উত্তরদাতাদের অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে চায় না বা করলেও ক্রেতাদের কিছু বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হয়।