আশিকের প্রিয়শপ সবার প্রিয়

প্রিয়শপের উদ্যোক্তা আশিকুল আলম খান। ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়শপের উদ্যোক্তা আশিকুল আলম খান। ছবি: সংগৃহীত

বছর ছয়েক আগেও অনলাইনে কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যবসা বাংলাদেশে এখনকার মতো পরিচিত হয়ে ওঠেনি। তখনই টিউশনি করে জমানো টাকা আর বোনদের সঙ্গে ধারকর্জ করে ই-কমার্স ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন আশিক। অল্প কিছু পুঁজি নিয়েই ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু। মাত্র সাড়ে ছয় বছরেই দেশি ই-কমার্স জগতে সবারই প্রিয় আর চেনামুখ এখন প্রিয়শপের এই আশিক।

পুরো নাম আশিকুল আলম খান। দেশে বর্তমানে পরিচিত যে কয়েকটি ই-কমার্স সাইট ভালো ব্যবসা করছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রিয়শপ ডটকম। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ২০০টির বেশি ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর ভূতের গলিতে প্রধান কার্যালয় প্রিয়শপের। প্রায় ১৫০ কর্মী ও এক হাজারের বেশি প্রিয়শপ পয়েন্ট উদ্যোক্তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতিসংঘের গবেষণায় ই-কমার্স খাতের আদর্শ মডেল হিসেবে প্রিয়শপ ডটকমের নাম উঠে এসেছে ইউএনসিটিএডি বাংলাদেশ অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদনে। এ ছাড়া গত বছর জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রিয়শপ শুরুর গল্প শোনাতে গিয়ে আশিক বলেন, ‘শুরুটা সহজ ছিল না। ছয় বছর আগে সাধারণ মানুষের অনলাইনে কেনাকাটায় তেমন ধারণা ছিল না। তখন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করা ছিল স্বপ্ন দেখে ঝুঁকি নেওয়ার মতো বিষয়। সবাই যেখানে চাকরির পেছনে ছোটে, তখন আমি টিউশনির জমানো টাকা ও বোনদের থেকে ধার নিয়ে অল্প কিছু মূলধন জোগাড় করে ফেলি। এরপর শুরু হয় খাঁটি পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ। শুরুতে ক্রেতার কাছে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সহজ উপায় ছিল না। তখন সহায়ক কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না। কেউ আগ্রহী ছিল না ই-কমার্সের সঙ্গে কাজ করতে। শুরুর দিকে নিজেদের নকশা করা পণ্য নিয়ে তরুণ উদ্যোক্তারা প্রিয়শপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তখন ধীরে ধীরে বাড়ছিল প্রিয়শপ। ২০১৫ সালের দিকে দেশের ই-কমার্সে বিদেশি বিনিয়োগ যুক্ত হতে শুরু করলে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যায় প্রিয়শপ ডটকম। তবে সে ধাক্কা ভালোভাবে সামলেছেন তিনি। দেশি ই-কমার্স সাইটে ক্রেতাদের আস্থা থাকায় নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রিয়শপ।’

আশিকুল আলম খান আরও বলেন, ‘প্রিয়শপ ডটকমকে আমরা খাঁটি পণ্যের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম বলি। বর্তমানে ২০০ ব্র্যান্ড, অনুমোদিত অংশীদার এবং হাজারের অধিক পরীক্ষিত স্থানীয় ভেন্ডরের লক্ষাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে বিলাসবহুল পণ্য গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে প্রিয়শপ।’ গ্রাহকের আস্থা অর্জনে ক্রেতাকেন্দ্রিক নীতিমালা এবং ‘শিওর থিং’, অর্থাৎ সঠিক পণ্য সরবরাহে কাজ করছেন তাঁরা। পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে নিজস্ব বাহক রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকায় এক থেকে তিন দিন ও ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজের উদ্যোগ নিয়ে বলতে গিয়ে আশিক বলেন, দেশে আমাজন বা আলিবাবা পরিচয়ের চেয়ে দেশের প্রিয়শপ হিসেবে পরিচয় গড়ে তুলতে কাজ করছেন তিনি। প্রিয়শপ বর্তমানে স্থানীয় পণ্যের প্রসার ও প্রচারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে গুরুত্ব দেওয়া। যখন সব বড়-ছোট প্রতিষ্ঠান শহরকেন্দ্রিক ব্যবসার দিকে দৌড়াচ্ছে, প্রিয়শপ ঠিক তার উল্টো কাজ শুরু করছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে তারা গ্রামে ছড়িয়ে দিচ্ছে ই-কমার্স সুবিধা। প্রতিটি গ্রামে চালু করা হচ্ছে প্রিয়শপ পয়েন্ট। যাঁদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা নেই বা অনলাইন শপিংয়ে আগ্রহ থাকলেও সাহস পান না, তাঁরা ওই পয়েন্ট থেকে প্রিয়শপ পণ্যের ফরমাশ দিতে পারবেন। এ উদ্যোগের নাম ‘জিরো’। এতে বিনা পুঁজিতে প্রিয়শপ পয়েন্ট চালু করতে পারবেন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা তাঁর গ্রামের চাহিদামাফিক পণ্য বিক্রির পাশাপাশি গ্রামে প্রস্তুতকৃত পণ্য অন্যান্য এলাকায় বিক্রির সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া দেশজুড়ে ডিজিটাল সেন্টারগুলোতেও প্রিয়শপ সুবিধা পাওয়া যাবে। বর্তমানে টেলিকম অপারেটর বাংলালিংক এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান ডিমানির সঙ্গে ই-কমার্স ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাঁর লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী দীপ্তি মণ্ডল, বন্ধু রোমেল ডি রোজারিও, তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা সোনিয়া বশির কবির ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্রেইন স্টেশন-২৩-এর কর্ণধার রাইসুল কবির।

আশিকুল আলম খান বলেন, বাংলাদেশ রিটেইল খাত এখনো পুরোপুরি সংগঠিত নয়। প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের এ খাতকে সংগঠিত করতে হবে। সঠিক পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন জরুরি। এ জন্য ক্রেতাদের সহজ ও নিরাপদ ই-কমার্স সেবা দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতা আইন সক্রিয় থাকতে হবে। ই-কমার্সের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা গেলে আগামী দিনে তৈরি পোশাকশিল্পের পরেই ই-কমার্স খাত জায়গা করে নেবে বলে মনে করেন তিনি।