মোগল আমল থেকেই আগরের গ্রাম

প্রক্রিয়াজাত করার জন্য কারখানার সামনে কেটে রাখা আগর গাছ
প্রক্রিয়াজাত করার জন্য কারখানার সামনে কেটে রাখা আগর গাছ

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের সালদিঘা গ্রামটি মোগল আমল থেকেই আগরের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। বে অব বেঙ্গল পারফিউমারি নামক প্রতিষ্ঠানের আওতায় এই গ্রামে গড়ে উঠেছে আগর উৎপাদনের জন্য ৫০টি ইউনিট। ৩০ থেকে ৩৫টি ইউনিট সব সময় চালু থাকে। উপজেলার ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আগর উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।

কোম্পানিটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবদুল কবির বলেন, ‘বংশপরম্পরায় মোগল আমল থেকেই আমাদের আগরের ব্যবসা। বাবা আবদুল নূর ৯৪ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে আগর উৎপাদনে জড়িত ছিলেন। দাদা খোরশেদ আলীও করেছেন। এভাবে বংশপরম্পরায় মোগল আমল পর্যন্ত আমাদের পরিবার আগর উৎপাদন করে গেছেন। এখন আমি করছি। আশা করছি, আমার ছেলেমেয়েরাও এই কাজেই জড়িত থাকবে।’
আগর তৈরি হয় আগরগাছের কাঠ থেকে। সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম এসব অঞ্চলে আগরগাছ উৎপাদিত হয়। আগর রপ্তানিকারকের উৎসাহে অন্য অঞ্চলেও কিছু কিছু আগর কাঠ উৎপাদিত হচ্ছে।

মোহাম্মদ আবদুল কবির
মোহাম্মদ আবদুল কবির

বাংলাদেশি মুদ্রায় বিশ্ববাজারে প্রতিবছর ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার আগরের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে রপ্তানি করে মাত্র ১৩ কোটি টাকার আগর। শুধু মুসলিম নয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও আগরের ব্যবহার বেশি। আগরের গন্ধে জিন-ভূত কাছে আসে না বলে বিশ্বাস করেন একধরনের মানুষ।
আবদুল কবির জানান, তিন ধরনের আগর তৈরি করেন তাঁরা। ১২ গ্রাম আগর বিক্রি হয় ৫ থেকে ১২ হাজার টাকায়। রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার ইত্যাদি দেশে। বিশ্ববাজারের ২ শতাংশও বাংলাদেশ রপ্তানি করতে পারে না বলে স্বীকার করেন তিনি।

আগর রপ্তানিতে নগদ সহায়তা পাওয়া গেলেও এই সহায়তা পেতে গেলে অনেক সময় লেগে যায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনেক ঝামেলা করা হয় বলে মন্তব্য করেন আবদুল কবির। তবে তিনি বলেন, আগর উৎপাদন ও রপ্তানির ভালো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন তিনি। কারণ, বিশ্ব এখন সবকিছুতেই অরগানিকের দিকে এগোচ্ছে। আগর একটি অরগানিক পণ্য।