ভেবে দেখুন কোন ব্যবসায় নামবেন

এসএমই খাতে ঋণ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ছবি: আইডিএলসি
এসএমই খাতে ঋণ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ছবি: আইডিএলসি

দেশে ভালো চাকরি যেমন অধরা সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে, তেমনি অনেকেই আবার চাকরি করতে এতটুকু আগ্রহী নন। এ ধরনের স্বাধীনচেতা, সাহসী ও সৃজনশীল তারুণ্য বা যুব সম্প্রদায় নিজেরাই কিছু একটা করতে, মানে ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিয়ে নামতে চান। কিন্তু ‘ধর মুরগি, কর জবাই’ মানসিকতায় হুটহাট করে নেমে পড়লেই এখন আর সফল হওয়া যায় না, বরং ব্যর্থ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। কারণ, সময় বদলেছে। আজকাল খুঁটিনাটি সব জেনে–বুঝে, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই মাঠে নামতে হয়।

নিজের বা পরিবারের কষ্টার্জিত অর্থ, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া ধারদেনা কিংবা ব্যাংকের দেওয়া ঋণ নিয়ে স্টার্টআপ বা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান, ভালো কথা। কিন্তু যাত্রা শুরু করার আগে ব্যবসা বা শিল্পটির অ আ ক খ থেকে শুরু করে দশ দিগন্তের খোঁজখবর আপনার জানা থাকতে হবে। ব্যবসায়িক ঝুঁকি এড়াতে হলে আপনি প্রথমেই শিল্প-ব্যবসায়ের সংজ্ঞাসহ প্রচলিত নীতিমালা জেনে নিন। এরপর কোমর বেঁধে নেমে পড়ুন।

নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে, কেন এসব জানতে হবে? জবাব খুবই সহজ, প্রচলিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আপনার নিজের ব্যবসায় রক্ষা ও তা টেকসই করার স্বার্থে। খুলেই বলা যাক, সরকার এখন বিভিন্ন সুবিধাসহ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তার পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচির আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে স্বল্প সুদে এসএমই ঋণ দেয়। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগও পাওয়া যায়। এসএমইর সংজ্ঞা ও নীতিসংক্রান্ত বিষয়গুলো জেনে নিলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন ব্যবসা বা উদ্যোগে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা মিলবে। এতে কোন ব্যবসাটি করবেন বা কোন উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নামলে বেশি ভালো করতে পারবেন, এমন একটা ধারণা তৈরি হবে আপনার মনে। ফলে জুতসই ব্যবসা করা বা শিল্প গড়ে তোলা এবং সেটির সীমারেখা মানে পরিধিও নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আপনার জন্য সহজ হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬-তে শিল্প-সেবা ও ট্রেডিং বা বাণিজ্য খাতের বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগের সংজ্ঞা ও ঋণসীমা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী শিল্প ও সেবা খাতের কটেজ বা কুটিরশিল্প, মাইক্রো শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) এবং বাণিজ্য বা ট্রেডিং খাতে মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের কথা বলা আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের (এসএমই) সঙ্গে এখন নতুন করে যোগ করা হয়েছে কটেজ (কুটির) ও মাইক্রো খাত। সব মিলিয়ে খাতটির নাম দেওয়া হয়েছে কুটির (কটেজ), মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই)। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৫ শতাংশই এখন আসছে এই খাত থেকে। আর মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ এই খাতে নিয়োজিত রয়েছে।

সিএমএসএমইর যত খাত

কুটিরশিল্প: ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ হলে সেটি হবে কটেজ ইন্ডাস্ট্রি বা কুটিরশিল্প। উৎপাদন খাত হিসেবে বিবেচিত। এই শিল্পে মোট জনবল হবে সর্বোচ্চ ১৫ জন।

মাইক্রো শিল্প: বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা হলে তা হবে মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রি। এই শিল্পে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা হবে ১৬ থেকে ৩০ জনের মধ্যে। এটিও উৎপাদন খাত হিসেবে বিবেচিত।

ক্ষুদ্র শিল্প: উৎপাদন ও সেবা—দুই ধরনেরই প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্রশিল্প শ্রেণিতে রয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন খাত হলে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা এবং জনবল হতে হবে ৩১ থেকে ১২০ জন। আর সেবা খাতের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ থাকতে হবে ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত, আর কর্মীসংখ্যা হবে ১৬ থেকে ৫০ জন।

মাঝারি শিল্প: উৎপাদন খাত হলে বিনিয়োগ হতে হবে ১৫ কোটি ৫০ কোটি টাকা। জনবল থাকবে ১২১ থেকে ৩০০ জন। আর সেবা প্রতিষ্ঠান হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে ২ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকার মধ্যে এবং জনবল হবে ৫১ থেকে ১২০ জন।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা, বিনিয়োগ ৫০ কোটি টাকার ওপরে হলে তা বৃহৎ বা বৃহদায়তনের উৎপাদনমুখী শিল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে কর্মীসংখ্যা হবে ৩০০ জনের বেশি। এ ছাড়া বৃহৎ সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ৩০ কোটি টাকার বেশি এবং কর্মীর সংখ্যা ১২০ জনের বেশি হবে। তথ্যসূত্র: জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬