প্রণোদনা ছাড়া ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবে না

আবদুল কাদের খান সভাপতি, বিজিএপিএমইএ
আবদুল কাদের খান সভাপতি, বিজিএপিএমইএ
>

সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ উপখাতের কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন বেড়েছে। পোশাকশিল্পের সহযোগী শিল্প হলেও সরকারের নীতি-সহায়তা পাচ্ছে না। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আবদুল কাদের খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার। 

প্রথম আলো: সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ পণ্য রপ্তানির ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?

আবদুল কাদের খান: রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের সহযোগী হিসেবে সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ উপখাত গড়ে উঠেছে। তবে গত কয়েক মাসে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসায়ও ভাটার টান পড়েছে। সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। যখন চাহিদা কমে যায়, ক্রেতারা তখন আরও কম দামে পণ্য কিনতে চান। অন্যদিকে কারখানায় কাজ না থাকলে আমাদের ব্যবসায়ীরাও অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। সব মিলিয়ে বাজারের অবস্থা ভালো না। অনেক কারখানা দিনের পুরো সময় উৎপাদন করার মতো কাজ পাচ্ছে না। কিছু কারখানা তো বসে গেছে। অবশ্য আমরা আশা করছি, আগামী মৌসুমে ক্রয়াদেশ বাড়বে। তবে বিষয়টি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা ভালো বলতে পারবেন। কারণ, তাঁরাই ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়াদেশ আনেন। তাঁদের কাছ থেকে আমরা ক্রয়াদেশ আনি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, গত ডিসেম্বরে শ্রমিকের মজুরি ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের পণ্যের বাড়তি দাম দিচ্ছেন না।

প্রথম আলো: ক্রয়াদেশ কেমন কমেছে?

আবদুল কাদের খান: সাধারণত বছরের এই সময়ে ক্রয়াদেশ কিছুটা কম থাকে। তবে গত বছরের চেয়ে অবস্থা খুবই খারাপ। ছোট-মাঝারি কারখানার ক্রয়াদেশ কমেছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ। তবে বড় কারখানাগুলো, যারা সরাসরি ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ আনছে, তারা মোটামুটি ভালো আছে। তারা তাদের উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। তবে সেই সংখ্যাটি খুবই কম। সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ পণ্য উৎপাদনের কারখানা আছে ১ হাজার ৭০০টি। বর্তমানে চালু আছে ১ হাজার ২০০টি। তার মধ্যে অর্ধেকই ছোট কারখানা। ২৫-৩০ শতাংশ মাঝারি। বাকিগুলো অপেক্ষাকৃত বড় কারখানা।

প্রথম আলো: বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে কী দরকার?

আবদুল কাদের খান: সর্বশেষ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার মধ্যে সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ পণ্যের অবদান প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। আমাদের জন্য পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন বেড়েছে। রপ্তানিকারকেরা লিড টাইম (উৎপাদন থেকে জাহাজীকরণের সময়) মেনে ক্রেতাদের পোশাক সরবরাহ করতে পারছেন। বর্তমানে পোশাকশিল্পের ব্যবসা খারাপ মানে হচ্ছে, তার সঙ্গে সম্পর্কিত সবাই কষ্টে আছেন। পোশাকশিল্পের দুরবস্থার কথা ভেবে সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে আমরা পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ার পরও সেটি পাচ্ছি না। এই বৈষম্য কেন? অন্যদিকে দীর্ঘদিন চেষ্টা করার পরও করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ রয়ে গেছে। অথচ পোশাকশিল্পের মালিকদের করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ ছিল। তবে সেটি নামতে নামতে বর্তমানে
১০-১২ শতাংশে চলে এসেছে। পোশাকশিল্প যদি কঠিন সময় পার করে, তাহলে সহযোগী শিল্পকারখানা একই অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। তাহলে একজন সুবিধা পাবে বাকিরা পাবে না, সেটি তো যথাযথ বিচার হতে পারে না। বর্তমানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে প্রণোদনা ছাড়া কোনো বিকল্প উপায় নেই।

প্রথম আলো: পণ্যের মান নিশ্চিতে পরীক্ষাগার স্থাপনে কত দূর এগোলেন?

আবদুল কাদের খান: বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হলে আমাদের পণ্যের মান পরীক্ষা করাতে হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর অর্থ খরচ করে সেই পরীক্ষা করাতে হয়। অথচ সরকারিভাবে দেশে পরীক্ষাগার থাকলে অনেক অর্থ সাশ্রয় হতো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সাত-আটটি পরীক্ষাগার আছে। আমরা ইইউর সহযোগিতায় ছোট পরিসরে একটি পরীক্ষাগার করেছি। তবে শুধু মোড়কীকরণ পণ্যের কয়েকটি পরীক্ষা করা যায় সেখানে। পূর্বাচলে গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র করার জন্য সরকার আমাদের এক একর জমি দিয়েছে। সেই জমির দাম পরিশোধের জন্য আমাদের প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। তবে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ফলে দুই বছরে অর্ধেক টাকাও ওঠেনি।