পেঁয়াজ কিনতে মিয়ানমারে নজর ব্যবসায়ীদের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের বিকল্প দেশ এখন মিয়ানমার। মিসর, চীন ও তুরস্ক থেকে বড় চালান এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি। প্রতিদিনই বাজারে দাম বাড়ছে। এ সুযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে আগবাড়িয়ে পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ মিয়ানমারে গিয়ে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করছেন।

তিন দিন ধরে টেকনাফে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ভিড় লেগে আছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট থেকে ব্যবসায়ীরা টেকনাফ এসে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বুধবার টেকনাফে কথা হয় ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী সোলতান আমির ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের কবির আহমদের সঙ্গে। সোলতান আমির প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বড় ভরসা এখন মিয়ানমার। এখান থেকে পেঁয়াজ কিনে নিজ নিজ এলাকার চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বাড়লেও বাজারে দাম কমছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে মিয়ানমারের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় তা ১২০-১২৫ টাকায় উঠেছে। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। খুচরায় তা ১১০ টাকায় বিক্রি হয়।

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তর গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিজেদের বাজার সামাল দিতে এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এরপরই বাংলাদেশসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বাংলাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৬০ টাকা কেজির পেঁয়াজ হয়ে যায় ১০০ টাকা। মাঝে কিছু কমলেও এখন কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর এখন প্রতিদিন টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। স্থলবন্দর দিয়ে পুরোনো ঋণপত্রের বিপরীতে প্রায় সাড়ে আট হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চীন ও মিসর থেকে ৬০০ টনের মতো পেঁয়াজ আমদানি হয়। ফলে এখন দেশে যে পেঁয়াজের সরবরাহ হচ্ছে, তার প্রধান উৎস হয়ে উঠছে মিয়ানমার। 

মিয়ানমার স্থলবন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর শুরুতে দিনে ৬০০ টন করে পেঁয়াজ আমদানি হলেও এখন তা হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। গত বুধবার বন্দরটি দিয়ে ১ হাজার ৩৩৮ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এ নিয়ে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর থেকে স্থলবন্দরটি দিয়ে গতকাল পর্যন্ত সাড়ে ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, নাফ নদীতে মিয়ানমারের পেঁয়াজের স্রোত নেমেছে। দিন-রাত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে।

বড় চালানের অপেক্ষা

মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ার পরও বাজারে দাম না কমায় ব্যবসায়ীরা এখন মিসর, চীন ও তুরস্ক থেকে বড় চালান কখন বন্দরে পৌঁছাবে, সেই অপেক্ষায় আছেন। প্রতিদিন পাইকারি ব্যবসায়ীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবরে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ তুরস্ক থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। আবার সিটি গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপসহ কয়েকটি বড় শিল্পগোষ্ঠীও ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। পেঁয়াজের এসব বড় চালান নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে এসে পৌঁছানোর কথা।