শেয়ারবাজারে নতুন সূচক চালুর উদ্যোগ

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে আলাদা একটি সূচক তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা মৌলভিত্তির কোম্পানি নিয়ে আলাদা এই সূচকটি তৈরি করা হবে। এই সূচকে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানি বাছাই করা হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী। ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ এই সূচক তৈরির কাজ করছে। সংস্থাটির আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক লিউ ফুজং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চলতি বছরের মধ্যে সূচকটি চালুর পরিকল্পনা আছে তাঁদের।

চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘চায়না-বাংলাদেশ পুঁজিবাজার সহায়তা’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে লিউ ফুজং এ কথা বলেন। তিনি বলেন, চীনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী আছে। তারা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে এদের সহায়তা দিতেই নতুন এই সূচকটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ডিএসই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ উদ্যোগে তৃতীয়বার এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজনে সহযোগী ছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনারস ও চীনের প্রতিষ্ঠান কিংডম টেকনোলজি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর পক্ষ থেকে চীনের ব্রোকারেজ হাউসসহ প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনে চীনের ৪০টি ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধি, ৫০ জন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদলকে সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ঘুরিয়ে দেখানো হয়।

ডিএসইর সভাপতি অধ্যাপক আবুল হাশেম বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনার কথা বলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাই চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে উভয়ই লাভবান হবে।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাজারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ১৩-এর কাছাকাছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় লভ্যাংশের পরিমাণ ৫ শতাংশ।

>

ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ এই সূচক তৈরি করছে
চলতি বছরেই এটি চালু হতে পারে

অনুষ্ঠানের শুরুতে জানানো হয়, ১৯৯০ সালে মাত্র পাঁচটি কোম্পানি নিয়ে যাত্রা শুরু করা সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২ হাজার ১৭০ টি। আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বন্ডের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৩৯ টি। বাজার মূলধন ২ হাজার ৪০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর মালিকানায় যুক্ত হয় চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ওয়াং জিয়ানজুং বলেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণ। সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ উদ্ভাবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেহেতু আমরা এখন ডিএসইর মালিকানায় আছি, সেহেতু প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ নতুন নতুন পণ্য চালুর ক্ষেত্রে আমরা ডিএসইকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে চাই।’

সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘আমাদের বাজারের বৈচিত্র্য কম। বাজার পুরোটাই ইকুইটিনির্ভর। বিনিয়োগযোগ্য পণ্যের বড় ধরনের এ ঘাটতি যেমন সংকটের কারণ, তেমনি একইভাবে তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগও।’

সম্মেলনের সহ-আয়োজক এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনারসের চেয়ারম্যান ইফতি ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের বড় বড় কোম্পানি যাতে দুই দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে অর্থায়নও করে থাকে তারা। এ জন্য তাদের ভিনেক্সট নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আছে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগে অর্থায়ন করতে এরই মধ্যে ডিএসইতে এই প্ল্যাটফর্মটি চালু করা হয়েছে। সম্মেলন উদ্বোধনের পর একাধিক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।