চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে

চট্টগ্রাম বন্দর। প্রথম আলো ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম বন্দর। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নিজস্ব সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় এই সতর্কতা জারির পর বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর কার্যক্রম সকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে অবস্থারত ছোট নৌযান নদীর উজানে পাঠানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শুক্রবার সকালে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করে। এরপরই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সংকেত ‘অ্যালার্ট-২’ জারি করে। সন্ধ্যায় ছয় নম্বর বিপৎসংকেত জারির পর বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা বাড়িয়ে অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। এটি বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, অ্যালার্ট-৩ জারি করার পর বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজ থেকে পণ্য ও কনটেইনার ওঠানো-নামানো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে শনিবার সকালের জোয়ারে সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সকাল ১১ টার মধ্যেই পুরো বন্দর জেটি ও যন্ত্রপাতি নিরাপদ রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের ভিত্তিতে চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। ৪ নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। এ ছাড়া বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়। মহা বিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়। তখন বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেটি, যন্ত্রপাতি ও পণ্যের সুরক্ষার জন্য ১৯৯২ সাল থেকে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অ্যালার্ট-২ জারি করার পর আজ বিকেলে বন্দর ভবনে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ। সভায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয় সভা থেকে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের মূল জেটিতে ১৬টি এবং বিশেষায়িত জেটিতে দুটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছিল। এখন কাজ বন্ধ করে কাল জোয়ারে সাগরে পাঠানো হবে। সব জাহাজের ইঞ্জিন চালু রাখা হয়েছে। বন্দর জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজ বাড়তি রশি দিয়ে শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। লাইটার জাহাজগুলো নদীর উজানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বাড়িয়ে চারটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হচ্ছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বন্দরে মোট ৯৪ টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে বহির্নোঙরে খালাস হয় এমন পণ্যবাহী বড় জাহাজ রয়েছে ৩৮টি। জেটিতে রয়েছে ১৮টি জাহাজ।